ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

ক্ষেপেছে মিসরীয়রা, আল আজহারের গাজা বিষয়ক বিবৃতি প্রত্যাহারের পেছনের কি?

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:০৩, ২৭ জুলাই ২০২৫

ক্ষেপেছে মিসরীয়রা, আল আজহারের গাজা বিষয়ক বিবৃতি প্রত্যাহারের পেছনের কি?

ছবি: সংগৃহীত

দুই চোখে অনাহারের শুষ্কতা, বুক ভরা মৃত্যু আর পেট ভরা শূন্যতা—এই হল গাজার আজকের বাস্তবতা। মার্চ মাস থেকে ইসরাইলের অবরোধে কার্যত এক মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের উপত্যকাটি। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থার সহায়তা আটকে দেয়ার কারণে গত এক সপ্তাহে শিশুসহ প্রায় ১০০০ মানুষ অনাহারে মারা গেছে।

এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে যখন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিবেকের দরজায় কড়া নাড়ে, তখন সেই আওয়াজই কেউ একজন মুছে দেয়। কায়রোভিত্তিক বিখ্যাত ইসলামিক প্রতিষ্ঠান আল আজহার আল শরীফ একটি আবেগঘন বিবৃতি প্রকাশ করেছিল। এতে গাজার দুর্দশার কথা তুলে ধরে মানবতার দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই বিবৃতিটি কিছুক্ষণ পরই ইন্টারনেট থেকে গায়েব হয়ে যায়।

ঠিক তখনই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্তর্জাতিক মুসলিম স্কলার ইউনিয়নের মহাসচিব আলী আল কারাদাঘি। “কেন এই নীরবতা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে?”—তিনি প্রশ্ন তোলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ। তার মতে, আল আজহারের বিবৃতি মুছে দেয়া একটি অযৌক্তিক এবং দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এটি মানবতা এবং ধর্মীয় বিবেকের কণ্ঠকে দমন করার নির্লজ্জ চেষ্টা।

আল আজহারের সেই মুছে ফেলা বিবৃতির অনুবাদ পাঠ করলে স্পষ্ট বোঝা যায়—এটি কেবল একটি ধর্মীয় বক্তব্য নয়, বরং এটি বিশ্বজোড়া মানবিক আবেদন। সেখানে বলা হয়, “আল আজহার আজ বিশ্ব বিবেকের কাছে এক করুণ আবেদন জানাচ্ছে। গাজার নিপীড়িত মানুষদের রক্ষা করুন। তাদেরকে এই নির্মম দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচান।”

বিবৃতিতে ইসরাইলের বর্তমান অবরোধকে সরাসরি গণহত্যা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে—যারা এই হত্যার নেপথ্যে অস্ত্রযোগান দেয় এবং মৌনসম্মতি দেয়, তারাও এই অপরাধের অংশীদার।

বিবৃতিতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, “আমরা এই বর্বর জাতিকে থামাতে সকল প্রভাবশালী শক্তিকে আহ্বান জানাই। মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ খুলুন। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।”

এমন এক সময়ে এই বিবৃতি মুছে ফেলা হয়েছে, যখন ইউরোপে এর প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন মানবাধিকার কর্মীরা। ডাচ শহর দ্য হেগে অবস্থিত মিশরীয় দূতাবাসের গেইটে শিকল ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করেছেন নেদারল্যান্ডসের একদল কর্মী। তাদের একজন ভিডিও বার্তায় মিশরের শাসক আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসিকে বিশ্বাসঘাতক শাসক বলে আখ্যা দেন।

মিশর, যে দেশটি গাজার দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থান করছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। যার ফলে জীবন রক্ষাকারী খাদ্য এবং ওষুধ গাজায় পৌঁছাতে পারছে না।

এই নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তার জবাব দিচ্ছে না জাতিসংঘ। কিছুই বলছে না পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা। ফলে আল আজহারের বিবৃতি সেই শূন্যতার মাঝে যেন এক পবিত্র অগ্নিশিখা হয়ে উঠেছিল—যা কেউ একজন মুছে দিলেও, তার ছায়া থেকে যাওয়ার কথা ইতিহাসের পাতায়।

 

শেখ ফরিদ 

×