
ছবি: সংগৃহীত
পরনে লাইফ জ্যাকেট, বন্দুকের নলের সামনে হাত উঁচিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে সবাই। এদের কেউ সন্ত্রাসী নয়। এমনকি কোনো উশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত নন। এরা কেবল অনাহারে থাকা গাজার মানুষদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিলেন—মানবতার খাতিরে। আর এই মানবিক কাজটিই হয়ে উঠেছে তাদের অপরাধ। এই ‘অপরাধে’ তাদেরকে সন্ত্রাসী কায়দায় আটক করেছে ইসরাইলের দখলদার নৌসেনারা।
তিনদিন আগে ‘হান্দালা’ নামের একটি ত্রাণবাহী জাহাজ নিয়ে ইতালি থেকে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন ২১ জন মানবতাবাদী স্বেচ্ছাসেবী। জাহাজটিতে ছিলেন সংসদ সদস্য, অভিনেতা, চিকিৎসক ও নার্সসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল অবরুদ্ধ গাজাবাসীর পাশে দাঁড়ানো, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
কিন্তু সেই সহায়তা গাজার উপকূলে পৌঁছানোর আগেই থেমে গেল। হান্দালাকে মাঝ সমুদ্রে হাইজ্যাক করে ইসরাইলি নৌবাহিনী, এবং এখন সেটিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আশদোদ বন্দরের দিকে।
টাইমস অফ ইসরাইল জানিয়েছে, ত্রাণবাহী জাহাজটির গন্তব্য গাজা হলেও অবরোধ ভেঙে যাওয়ার আগেই সেটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরাইলি নৌসেনারা। এর আগে একাধিক ড্রোন দিয়ে জাহাজটির গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে প্রেস টিভি।
‘হান্দালা’র ক্রুরা ইসরাইলি নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। পরে সেনারা অস্ত্রের মুখে সবাইকে আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করে এবং হেফাজতে নিয়ে যায়।
এই মিশনটি ছিল ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্যোগে। ইতালির গ্যালিপোলি বন্দর থেকে জাহাজটি রওনা দিয়েছিল গাজার দিকে। যাত্রাপথে একপর্যায়ে সংস্থাটির সঙ্গে জাহাজটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যদিও কিছু সময় পরে জানা যায় হান্দালা পুনরায় যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু এবার আর শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারল না। দখলদার সেনাদের হস্তক্ষেপে মানবতার জাহাজ থেমে গেল গাজার দুয়ারে পৌঁছানোর আগেই।
এটাই প্রথম নয়। এর আগে গত জুন মাসে বিশ্বখ্যাত পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ-এর নেতৃত্বে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল আরেকটি ত্রাণবাহী জাহাজ—‘মেডলিন’। সেই জাহাজটিকেও গাজা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই ইসরাইলি ১৩ ইউনিটের নৌ কমান্ডো বাহিনী আটক করে। পরে সেটিকে জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয় এবং গ্রেটা থুনবার্গসহ অন্য স্বেচ্ছাসেবীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
গাজার অনাহারগ্রস্ত, যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষগুলোর জন্য যে সামান্য সহানুভূতি নিয়ে বিশ্ব এগিয়ে আসছে, সেটিকেও বারবার রুখে দিচ্ছে ইসরাইল। জাহাজের মাটিতে পড়ে থাকা নীরব স্বেচ্ছাসেবকদের আত্মসমর্পণ—মানবতার কাছে যেন এক প্রগাঢ় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে রয়ে যায়।
শেখ ফরিদ