ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

রাষ্ট্রের মূলনীতি সংশোধনের বিরুদ্ধে বামপন্থী ৪ দল, সংলাপ বয়কটের হুমকি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ২৭ জুলাই ২০২৫

রাষ্ট্রের মূলনীতি সংশোধনের বিরুদ্ধে বামপন্থী ৪ দল, সংলাপ বয়কটের হুমকি

সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি হিসেবে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবিত ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করা নিয়ে আপত্তি তুলেছে ৪টি বামপন্থী রাজনৈতিক দল—সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ। তবে, বিএনপি-জামায়াত, এনসিপিসহ অন্যান্য দলগুলো কমিশনের প্রস্তাবের সাথে একমত হয়েছেন।

আজ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে দলগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরেন। এই নিয়ে কমিশনের বৈঠকে কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়।

মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে ঐক্যমত হওয়া সম্ভব না। কারণ এখানে বিভিন্ন আদর্শের মানুষ আছে। এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে যাবে, তারা সিদ্ধান্ত দেবে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের এই সংবিধানে অনেক অসম্পূর্ণতা আছে। সেজন্য আমরা আলোচনা করছি, যাতে সম্পূর্ণ করা যায়। কিন্তু মূলনীতির প্রশ্নে ছাড় দেওয়া সম্ভব না।

বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে প্রিন্স বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি প্রসঙ্গে এইভাবে লেখা যেতে পারে: সংবিধানে রাষ্ট্রীয় পরিচালনার চার মূলনীতির সঙ্গে (৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা) সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যুক্ত করা যেতে পারে।

প্রিন্সের দাবি, নীতিগত বিষয় যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শব্দের মারপ্যাঁচে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার মূলনীতি আছে, সেটা পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত জাতির সামনে প্রকাশিত করা হয়—তাহলে সেটার সঙ্গে আমরা একেবারেই নাই। এইরকম অবস্থা যদি চলতে থাকে, আমাদের পক্ষে ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে আলোচনা নিয়মিত করা সম্ভব হবে না।

একইসঙ্গে যে ঐক্যমত্য গঠনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে একমত হচ্ছি, সেটাও বাধাগ্রস্ত হবে। কমিশনের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন এই নেতা।

কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতির প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কমিশনের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বরং এটাই আমাদের প্রস্তাব।

গণসংহতির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিগুলি—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা—সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে, বিশেষ করে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে।

তিনি বলেন, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের মতো বিতর্কিত ধারণার পরিবর্তে কমিশন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন, যা বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্ন পূরণ করবে।

বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমরা গত ৪ দিন ধরে আলোচনা করছি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মনে করে, ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ সমাজতন্ত্র আন্তর্জাতিকভাবে একটি পরিত্যক্ত বিষয় হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বিগত ৪ দিনের আলোচনার পর কমিশন আজকে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার প্রতি আমরা সমর্থন দিয়েছি। যদিও আমাদের অনেকের মনের মধ্যে ভিন্নমত আছে, সেটা হলো ‘আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’—এই শব্দটা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারপর কমিশনের প্রস্তাবে যেহেতু ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতির কথা আছে, তাই আমরা ভিন্নমত থেকে সরে এসেছি। তবে ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দল যদি সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে এবং সেটা পাস হয়, হয়তো তখন আমরা তার বিরোধিতা করব না।

একই প্রসঙ্গে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের দলীয় অবস্থান হচ্ছে পূর্বের (মূলনীতি) সবকিছু বাতিল করা। কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা আছি। আমরা পূর্বেকার তর্কে যেতে চাই না। 

সানজানা

আরো পড়ুন  

×