
ছবি:সংগৃহীত
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও জনপ্রিয় সামরিক বিমান তৈরি করে আসছে। অনেকেই মিগ (MiG) সিরিজের যুদ্ধবিমানের কথা জানেন, তবে রাশিয়ার বিমান প্রযুক্তির আরেক বড় নাম হলো সুখোই (Sukhoi)। এই প্রতিষ্ঠানটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই সামরিক বিমান তৈরি করছে।
আজকের দিনে সুখোই-এর সবচেয়ে অত্যাধুনিক বিমান হলো Su-57 “Felon”, একটি স্টেলথ ফাইটার যা রাশিয়ার এভিয়েশন প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
সুখোই বিমানের খ্যাতি মূলত এর চমৎকার কৌশলগত চালনা ক্ষমতা, তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী দাম ও রক্ষণাবেক্ষণের সহজলভ্যতার জন্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে সুখোই রাশিয়ার অন্যতম সফল রপ্তানি পণ্য হয়ে উঠেছে।
বিশ্বজুড়ে সুখোই-এর উপস্থিতি
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ২,৬০০টিরও বেশি সক্রিয় সুখোই সামরিক বিমান ব্যবহৃত হচ্ছে, যা সুখোইকে Lockheed Martin-এর পর দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক বিমান নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ফ্লাইটগ্লোবাল-এর ২০২৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সুখোই বিমান রয়েছে রাশিয়ার হাতে — মোট ১,১১৩টি। এর মধ্যে ৩৮৪টি বিমান Su-27, Su-30, Su-34 এবং Su-35 (ফ্ল্যাঙ্কার সিরিজ)-এর অন্তর্গত।
সবচেয়ে বেশি সুখোই ব্যবহারকারী দেশগুলো
চীন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে — প্রায় ৪০৪টি সুখোই ভিত্তিক বিমান রয়েছে তাদের কাছে। চীন কিছু বিমান যেমন Shenyang J-11, নিজ দেশে লাইসেন্সের আওতায় তৈরি করে, যা মূলত Su-27-এর সংস্করণ।
ভারত তৃতীয় স্থানে রয়েছে — ২৬৫টি Su-30MKI রয়েছে ভারতের হাতে। এই বিমানগুলো হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) এর মাধ্যমে ভারতে উৎপাদিত হয়, যার ফলে ভারত একমাত্র দেশ যারা নিজ দেশে সুখোই বিমান তৈরি করে।
এর পরের অবস্থানগুলো:
- আলজেরিয়া – ৯৪টি
- ভিয়েতনাম – ৭৩টি
- কাজাখস্তান – ৬৮টি
- সিরিয়া – ৫৭টি
- বেলারুশ – ৫৪টি
- ইউক্রেন – ৫৩টি
বিশ্বে সব সুখোই বিমানের মধ্যে Su-30 এবং Su-24 সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। যথাক্রমে এই দুটি মডেল গঠন করে মোট ২১.৮১% এবং ১৬.৫%। তবে Su-24 পুরনো হওয়ায় অনেক দেশ ইতোমধ্যে এগুলো অবসর নিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কাজাখস্তান গত বছর ১৩টি Su-24 রিটায়ার করেছে।
ছোট দেশগুলোর সুখোই বহর
সুখোই বিমান ব্যবহারকারী শীর্ষ ১০ দেশের বাইরেও আরও ২৫টি দেশ রয়েছে যাদের কাছে এই বিমান রয়েছে:
- উত্তর কোরিয়া – ৫২টি
- আঙ্গোলা এবং উজবেকিস্তান – ৩৮টি করে
- পোল্যান্ড – ৩২টি (Su-22)
- ইরাক – ৩০টি
- তুর্কমেনিস্তান – ২৫টি
- ইরান – ২৪টি
- ইয়েমেন এবং ইথিওপিয়া – ২৩টি করে
- ভেনেজুয়েলা – ২১টি
অন্য উল্লেখযোগ্য দেশগুলো:
- আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান – ১৯টি করে
- মালয়েশিয়া – ১৮টি
- ইন্দোনেশিয়া ও সুদান – ১৬টি করে
- চাদ ও বুলগেরিয়া – ৯টি করে
- পেরু – ৮টি
- ডিআর কঙ্গো ও উগান্ডা – ৬টি করে
- ইকুয়েটোরিয়াল গিনি – ৪টি
- লিবিয়া – ৩টি
- এরিত্রিয়া, আইভরি কোস্ট, মিয়ানমার, ও নাইজার – ২টি করে
ভবিষ্যৎ কী বলছে?
রাশিয়ার সামরিক বিমান প্রযুক্তির বৈশ্বিক ছাপ স্পষ্ট। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া বর্তমানে নতুন সুখোই রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। ভবিষ্যতে, রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত হলে রাশিয়া আবারও Su-75 “Checkmate” এবং Su-57-এর উন্নত সংস্করণ নিয়ে বাজারে ফিরতে পারে। এসব উন্নত ফাইটার জেট যুক্তরাষ্ট্রের F-35 বা F-22-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
মারিয়া