
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে এবার প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাল ইসরাইলের তিন ঘনিষ্ঠ মিত্র—ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। গত কয়েক মাসে গাজায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত এবং মানবিক বিপর্যয়ের জন্য ফ্রান্স একাধিকবার দোষারোপ করেছে তেল আবিবকে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
এবার একই সুরে কথা বলেছে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। তাদের অভিযোগ, ইসরাইল যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হয়েছে এবং গাজার মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অন্থনি আলবানেজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরাইলের হামলায় গাজা এখন মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। ক্ষুধার্ত ও নিরাপরাধ গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি অভিযোগ করেন, ইসরাইল খাদ্য ও পানির সন্ধানে বের হওয়া সাধারণ মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে।
একই রকম বক্তব্য দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। তিনি বলেন, কানাডা থেকে পাঠানো মানবিক সহায়তা গাজায় পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে ইসরাইল, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। গাজায় চলমান ভয়াবহ মানবিক সংকট নিরসনে দ্রুত যুদ্ধবিরতি চুক্তির আহ্বান জানান কার্নি। তিনি আরও বলেন, গাজার ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ইসরাইলকে সম্মান দেখাতে হবে।
এমন প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স আরও বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। ম্যাক্রো বলেন, “শুধু যুদ্ধবিরোতির মাধ্যমেই শান্তি সম্ভব। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা লাঘবের এখনই সময়।”
ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ একে “ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেছে।
ফরাসি অবস্থানকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “ফ্রান্স যদি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তবে ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাস যে হামলা চালিয়েছিল, সেটাকেও বৈধতা দেওয়া হবে।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফ্রান্সের পদক্ষেপকে "বেপরোয়া" বলে মন্তব্য করেছেন। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও ফ্রান্সের পথে হাঁটবে কিনা, সে নিয়ে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ও কৌতূহলের জন্ম নিয়েছে।
এদিকে, ইসরাইলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী এমিচাই এইয়াহু বলেন, “একদিন গাজা পুরোপুরি ইহুদি উদ্দেশিত হবে।” গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেও দাবি করেন তিনি। তার এই বক্তব্য বিশ্বজুড়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এবং অনেকে একে “ইসরাইলিদের নিষ্ঠুর মানসিকতার প্রতিফলন” হিসেবে দেখছেন।
শেখ ফরিদ