ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

ইরান যেভাবে আমেরিকাকে বিপদে ফেলেছে

প্রকাশিত: ০০:২৩, ২৭ জুলাই ২০২৫

ইরান যেভাবে আমেরিকাকে বিপদে ফেলেছে

ছবি: সংগৃহীত

টান পড়েছে আমেরিকার যুদ্ধাশ্রের ভান্ডারে। নিজে কোন দেশের সাথে যুদ্ধে না জড়িয়েও ইসরাইলের জন্যই ট্রাম্পের সমরাস্ত্র ভান্ডারের অবস্থা বেহাল। তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে যখন যুদ্ধ করে যাবে তখন স্বল্প সময়ের মধ্যে কোথায় এত অস্ত্র পাবে? ওয়াশিংটনে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সব মহলে।

ইরানের সাথে ইসরাইলি যুদ্ধে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলের একমাত্র শক্তি মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সমরাস্ত্র সরবরাহ করছে শুরু থেকেই। কিন্তু ইরান যখন মিজাইলের বহর দিয়ে ইসরাইলের তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে, তখন বন্ধু দেশের এমন দুরবস্থা মেনে নিতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি ঠিক করলেন হামলা চালাবেন ইরানের পরমাণু স্থাপনায়। সেই মতো ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহানে আঘাত হানে ট্রাম্পের বি-টু বোম্বারের বাংকার বাস্টার। কিন্তু মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের প্রত্যাঘাতে এই সংঘাত থামাতে বাধ্য হন ট্রাম্প। এরপরই খবর আসতে শুরু করে—ইরানি মিজাইল বৃষ্টি প্রতিহত করতে গিয়ে বিপদজনকভাবে ফুরিয়ে গেছে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ইন্টারসেপ্টর।

এবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানালো—এই যুদ্ধের কারণে মার্কিন মজুদেরও বেহাল দশা। প্রতিবেদনে ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্রের অভূতপূর্ব সহায়তার ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র দুটো THAAD সিস্টেম দিয়েছিল। কিন্তু ইরানি মিজাইল সেগুলো ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিল যুদ্ধে। এর বাইরেও ছিল প্যাট্রিয়ট মিজাইল ব্যবস্থা।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বহু বিলিয়ন ডলারের আমেরিকান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইরানি মিজাইলগুলো এতটাই অপ্রতিরোদ্ধ ছিল যে, সৌদি আরবের কেনা থার্ড ইন্টারসেপ্টর ইসরাইলকে দেয়ার পরিকল্পনায় ছিল মার্কিন কর্মকর্তারা।

এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫০টির বেশি থার্ড ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার হয়েছে। ব্যবহৃত থার্ডের ইন্টারসেপ্টরের শূন্যতা পূরণে ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। সেই সাথে এগুলো পূরণ করতে এক বছরের বেশি সময় প্রয়োজন। এই সিস্টেম নিয়ে কাজ করা মার্কিন প্রতিরক্ষা জায়ান্ট লকহিড মার্টিন বছরে মাত্র ১০০টি ইন্টারসেপ্টর তৈরি করতে পারে।

আমেরিকার মিজাইল ছাড়াও ইসরাইলি মিজাইলের মজুদও দ্রুত শেষ হয়ে গেছে বলে যুদ্ধবিরোতির পর জানিয়েছিল গণমাধ্যমগুলো। যুদ্ধে ইসরাইলের ডেভিড স্লিং এবং আয়রন ডোমের ইন্টারসেপ্টর প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। ইরান যদি আরো কয়েকটি বড় মিজাইল হামলা করতো, তাহলে তেলআবিবের অ্যারো থ্রি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ইন্টারসেপ্টরের রিজার্ভও শেষ হয়ে যেত।

এই যুদ্ধে ইসরাইলকে সাহায্য করতে গিয়ে সাগরেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নৌবাহিনী ব্যবহার করেছে নিজেদের ৮০টি স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল থ্রি ইন্টারসেপ্টর, যেগুলোর প্রতিটির দাম ৮ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে। সমুদ্রে মিসাইল পুনরায় মজুদ করতে না পারায় যুদ্ধের মাঝামাঝি বন্দরে ফেরত আনা হয়েছিল আমেরিকান ডেস্ট্রয়ারকে। যেটিকে আমেরিকার উদ্বেগজনক দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

শেখ ফরিদ 

×