সতর্ক হোন! ওয়াইফাই রাউটার দিয়েই ট্র্যাক করা সম্ভব আপনার চলাফেরা

স্মার্টফোন, সিসিটিভি ক্যামেরা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার নজরদারির বাইরেও এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল প্রযুক্তি। রোমের লা সাপিয়েনজা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সম্প্রতি এমন এক চাঞ্চল্যকর পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন, যা কোনো ডিভাইস ছাড়াই শুধুমাত্র Wi-Fi সিগনালের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একজন মানুষকে শনাক্ত ও ট্র্যাক করতে সক্ষম।

এই নতুন প্রযুক্তির নাম WhoFi। এটি মানুষের শরীর Wi-Fi সিগনালের সঙ্গে কীভাবে প্রতিফলিত ও প্রবাহিত হয়, সেই ভিত্তিতে “বডি ফিঙ্গারপ্রিন্ট” তৈরি করে এবং সেখান থেকেই তার পরিচয় শনাক্ত করে। গবেষকদের দাবি, এই পদ্ধতিতে একজন ব্যক্তিকে একই জায়গায় বা অন্য জায়গায় পুনরায় শনাক্ত করা যায় ৯৫.৫ শতাংশ নির্ভুলতায়।

কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?

Wi-Fi সিগনাল যখন মানুষের শরীরের মধ্য দিয়ে যায় বা তার শরীরে প্রতিফলিত হয়, তখন নির্দিষ্ট একধরনের তরঙ্গ-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। WhoFi সিস্টেম এই প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে ব্যক্তির শরীরের একটি “ডিজিটাল ছাপ” তৈরি করে। তারপর সে ছাপ দিয়েই ব্যক্তি শনাক্ত ও ট্র্যাক করা যায়।

গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র দুটি সাধারণ TP-Link N750 রাউটার এবং ১৪ জন স্বেচ্ছাসেবক, যাদের প্রত্যেকেই আলাদা পোশাক ও ব্যাগপত্র পরেছিলেন। তার পরও সিস্টেম ৯৫% পর্যন্ত নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

ক্যামেরার বিকল্প হতে পারে WhoFi?

গবেষকেরা বলছেন, WhoFi ক্যামেরাভিত্তিক নজরদারির চেয়ে অনেক দিক থেকেই কার্যকর হতে পারে। এটি আলো বা দৃশ্যমানতার উপর নির্ভর করে না, দেয়ালের আর পেছনেও কার্যকরভাবে “দেখতে” পারে।

ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে

এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

একদিকে, কোনো দোকানে নির্দিষ্ট গ্রাহক ফিরে এলে তাকে স্বাগত জানিয়ে কুপন পাঠানো যেতে পারে।

অন্যদিকে, কারও অজান্তে তার চলাফেরা নজরদারির আওতায় আনা বা ব্যক্তিগত জায়গায় প্রবেশের তথ্য সংগ্রহ করাও সম্ভব।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, Wi-Fi এখন শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যম নয়, বরং হতে পারে ভবিষ্যতের সবচেয়ে নিরব নজরদারি যন্ত্র।

গোপনীয়তার নতুন সংকট?

বর্তমানে এটি একটি প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা হলেও এর বাস্তব প্রয়োগ হলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ধারণাই বদলে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রযুক্তি যদি কখনও বাণিজ্যিক বা সরকারি পর্যায়ে ব্যবহার শুরু হয়, তবে সেটি নাগরিক স্বাধীনতার জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।