ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজয়ের সূচনা

খোকন আহম্মেদ হীরা

প্রকাশিত: ০১:২২, ২৫ জুলাই ২০২৫

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজয়ের সূচনা

বরিশালে জুলাই আন্দোলনের খণ্ডচিত্র

বহুল আলোচিত ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে বরিশাল থেকেই শুরু হয়েছিল বিজয়ের সূচনা। কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে ওই বছরের ১৮ জুলাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে বের হতে বাধা প্রদান করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে উঠতে চাইলে টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে ক্ষমা চেয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরাজয়ের এ খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে মনোবল ভাঙতে শুরু করে আন্দোলন প্রতিহতকারীদের।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, ২০১৮ সালের সরকারি পরিপত্রকে বেআইনি ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ হাইকোর্ট কর্তৃক সরকারি চাকরিতে পূর্বেকার কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল করলে সূচনা হয় ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন। তবে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমন-পীড়ন, সশস্ত্র ও সহিংস হামলায় হাজারো মানুষের প্রাণহানিতে সে আন্দোলন দীর্ঘ পনেরো বছরের সঞ্চিত ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ দানবীয় শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে বাজিয়ে দেয় একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের ঘণ্টা।
তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় এই রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে পুড়ে তারুণ্যের এক অস্থির সংগ্রামী সময়ের নানান গল্প মিশে আছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোনা থেকে রাজপথে।
সুজয় শুভ বলেন, শুরুতে ৯ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ববি শিক্ষার্থীরা। ওইদিন প্রধান ফটকে বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন এক শিক্ষার্থীর পিঠে কোটা নিপাত যাক, আরেক শিক্ষার্থীর পিঠে মেধাবীরা মুক্তি পাক, লেখা যেন স্বৈরাচারী এরশাদ শাসনের পতনের আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি ভাসিয়ে তুলছিল উপস্থিতিদের মাঝে।
২০২৪ সালের ১ জুলাই ॥ ঈদ-উল আজহার দীর্ঘদিনের ছুটি শেষে সবেমাত্র ক্যাম্পাস খুলেছে। ঠিক তখন চলছে প্রত্যয় পেনশন স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি। ওইদিন বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেন ববি শিক্ষার্থীরা। পরের দিন ২ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ববি’র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন শ্লোগানে উত্তাল করে তোলে পুরো এলাকা।
৩ জুলাই বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা ভিত্তিক নিয়োগ, নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না, কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধা-ভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবি বাস্তবায়িত না হলে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
৪ জুলাই বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় সেখানে তারা সমাবেশ করেন এবং বই পুড়িয়ে কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবি করেন। দুপুরের দিকে অবরোধ চলাকালীন ববি’র তৎকালীন উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসের ভিতর আন্দোলন করতে অনুরোধ জানাতে আসলে শিক্ষার্থীরা তার কথা প্রত্যাখান করে মহাসড়কেই আন্দোলন চালিয়ে যায়। তবে সেদিন নামধারী কিছু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের মহাসড়কে অবরোধের জন্য তৈরি বেস্টনি ছুড়ে ফেলে দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি ভন্ডুল করে। ওইদিন ছাত্রলীগের হামলায় আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী আহত ও ক্যাম্পাস গণমাধ্যমকর্মী আবু উবায়দার ছাত্রলীগ কর্তৃক লাঞ্ছিত হন।
এরপর ৭ থেকে ১০ জুলাই কোটা সংস্কার ও চার দফা দাবিতে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে মহাসড়ক অবরোধ করে টানা চারদিন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সকাল-সন্ধ্যাব্যাপী ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবরোধ চলমান ছিল। এর মধ্যে ৯ জুলাই সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে প্রথমবারের মতো মশাল মিছিল বের করেন। ১১ জুলাই দুপুর দুইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে চাইলে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতিতে তীব্র ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এরপর আবাসিক হল এবং অন্য স্থান থেকে একে একে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে মূল ফটকের সামনে থেকে পুলিশ হটিয়ে রাজপথ দখলে নেন। ওইদিন সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের ববি’র প্রধান গেট সংলগ্ন এলাকা।
১৪ জুলাই বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা নিরসনের জন্য সংসদে আইন পাশের লক্ষ্যে জরুরি অধিবেশন আহ্বান এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে নগরীর বেলস পার্ক থেকে পদযাত্রা করে তৎকালীন বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলামের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও মশাল মিছিল কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের পরোক্ষভাবে ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ হিসেবে অভিহিত করলে সেই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১৫ জুলাই মিছিল ও শ্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ববি ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে মিছিল করে গ্রাউন্ড ফ্লোরে জড়ো হন। এ সময় তারা শেখ হাসিনাকে ব্যঙ্গ করে, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার-সরকার’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকেন।

ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, মারধর ও সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহতের ঘটনা শুনে আবারো উত্তাল হয়ে উঠে ববি ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা রুখে দিতে লাঠি হাতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় অবরুদ্ধ মহাসড়ক।
ওইদিন রাতভর জাবি, ঢাবিসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের নগ্ন হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই বেলা তিনটার দিকে বরিশাল শহর থেকে মিছিল নিয়ে দপদপিয়া সেতু পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষার্থীদের একাংশ এবং আবাসিক হল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল এসে একত্রিত হয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষোভ চলাকালীন মুহুর্তে রংপুরের বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ অন্যদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজপথ। ওইদিন প্রায় সাড়ে ছয়ঘণ্টা অবরোধ থাকে মহাসড়ক।
১৭ জুলাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বন্ধ ঘোষণার পর বেলা তিনটার মধ্যে ববি শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিলে সকালে হলগুলো থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন শিক্ষার্থীরা। সেদিন হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল পালন করেন। এরপর সন্ধ্যায় সারাদেশে কোটা আন্দোলনে শহীদ শিক্ষার্থীদের স্মরণে ও অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর জন্য ববি শিক্ষার্থীরা একটি শহীদ বেদি নির্মাণ করেন।
ববির ইতিহাসে স্মৃতিবিজড়িত অধ্যায়ের মধ্যে ১৮ জুলাই অন্য দিন হয়ে থাকবে। সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির দিনটিতে সকাল ১০টার মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এবিপিএনের উপস্থিতি ঘটতে থাকে ব্যাপক হারে। আর শিক্ষার্থীরা সাড়ে ১০টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের নিচে জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে মহাসড়কে বের হতে চাইলে, পুলিশ তাদের প্রধান ফটকের ভেতরে আটকে রাখার চেষ্টা চালায়। এরপর শিক্ষার্থী-পুলিশ কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শুরু হয় সংঘর্ষ।
সংঘর্ষে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে যৌথবাহিনী। এতে অর্ধশতাধিকেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটে। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা ও বরিশাল-ভোলা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের মাইকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের পাশে স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয়রাও একাত্মতা প্রকাশ করে সড়কে নেমে পড়েন।
এ দিকে শিক্ষার্থীদের মহাসড়কে অবস্থানের কিছুক্ষণ পর খয়রাবাদ সেতুর প্রান্তে আটকে পড়ে পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা। তারা বরিশাল নগরমুখী হতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেয়। পরে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড দিয়ে তাদের দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। মূলত ওইদিন (১৮ জুলাই) থেকেই জুলাই অভ্যুত্থানে বরিশাল থেকে বিজয়ের সূচনা শুরু হতে থাকে।
এরপর প্রশাসনিক চাপে ১৯ জুলাই রাতে হল ছেড়ে যায় শিক্ষার্থীরা। অনেকেই দেশের চলমান কারফিউতে পড়েন বিপদে। বন্ধু কিংবা পরিচিতদের মেসে ওইরাতে আশ্রয় নেয় শিক্ষার্থীরা। ২৭ জুলাই হল খোলার পর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সাধারণ জনগণকে হয়রানি না করা, শিক্ষার্থীদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক কোনো ধরনের হয়রানি না করা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও ক্যাম্পাসে নিরাপদ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের চার দফাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত নয় দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা।
২৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চলা মিটিংয়ে ববি ছাত্রলীগের পরিচয়ধারী নেতারা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১০ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত করে। পহেলা আগস্ট দেশব্যাপী ছাত্র হত্যা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ছাত্র-শিক্ষক সংহতির কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসলে ববি’র সমন্বয়কসহ ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে কয়েকজন শিক্ষক জিম্মানামা নিয়ে তাদের মুক্ত করে আনেন।

ওইদিন পরিচয়ধারী ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। সে সময় পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ের সামনে থেকে জোর করে সরিয়ে নিয়ে ক্যাম্পাস গণমাধ্যমকর্মী মাসুদ রানাকে হেনস্তা করেন ছাত্রলীগের পরিচয়ধারী কয়েক নেতা।
৩ আগস্ট নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ জন শিক্ষক বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের ওপর হত্যা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে এক যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন।
সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জনতার একদফা স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হলে ববি শিক্ষার্থীরাও মিশে যায় জন¯্রােতে। বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ-চৌমাথা এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলনে যুক্ত থাকেন ববি শিক্ষার্থীরা। এরপর ৫ আগস্ট দেশের নতুন স্বাধীনতার বীজ বপন হলে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল নগরীতে অস্ত্রের মহড়া ॥ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি শুরু থেকেই সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরিশালের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে সরব ছিলেন। এতে খুবই অল্প সময়ে যুক্ত হন শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ, সরকারি পলিটেকনিক কলেজ, সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, বরিশাল কলেজসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
ফলে মধ্য জুলাইয়ের আগে থেকেই বিভাগীয় শহর বরিশালে কোটা সংস্কারের দাবি জোরালো হতে শুরু করে। এর মধ্যেই সরকারি ব্রজমোহন কলেজে ছাত্রলীগ হামলা চালায় আন্দোলনকারীদের ওপর। পরবর্তীতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শক্ত প্রতিরোধের কারণে সদ্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তকমা পাওয়া ছাত্রলীগ সে সময় আর ক্যাম্পাসে অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। একই অবস্থা দেখা যায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যখন তীব্র হতে শুরু করে তখন তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন রাজপথে মারমুখী হয়।

প্যানেল হু

×