
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে আবারও আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বললেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিস থেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।’
মূলত ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগ এবং নিজ প্রশাসনের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
এই প্রথম নয়, এর আগেও বহুবার একই অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। তবে এবার তা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন তার প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তদন্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখতে সরকারি যন্ত্র ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে। মূলত যেসব কর্মকর্তা ২০১৬ সালে রাশিয়ার নির্বাচনি হস্তক্ষেপ তদন্ত করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার দপ্তর থেকে একটি বিরল বিবৃতি দেওয়া হয়। ওবামার মুখপাত্র প্যাট্রিক রোডেনবুশ বলেন, ‘হোয়াইট হাউজ থেকে প্রতিনিয়ত যে ধরনের ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়, তা নিয়ে আমরা সাধারণত কোনো প্রতিক্রিয়া জানাই না। তবে এই অভিযোগ এতোটাই অযৌক্তিক যে এর জবাব দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এটি নিছকই বিভ্রান্তি ছড়ানোর একটি দুর্বল প্রচেষ্টা।’
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ইতিহাস বদলের চেষ্টা?
ট্রাম্পের এই ক্ষোভপ্রকাশের পেছনে রয়েছে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের নতুন একটি প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ অতটা গুরুতর ছিল না—যেমনটা এতোদিন ধরে বলা হয়ে এসেছে।
প্রতিবেদনে ওবামা প্রশাসনের কিছু ইমেইলের কথা তুলে ধরা হয়, যেখানে বলা হয়েছে—রাশিয়া সরাসরি ভোট চুরির জন্য কোনো স্টেট ইলেকশন সিস্টেম হ্যাক করেনি। যদিও, ওবামা প্রশাসন কখনোই দাবি করেনি যে ভোটের ফল সরাসরি বদলে দেওয়া হয়েছিল। বরং তারা বারবার বলেছে, রাশিয়া ভুয়া সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও উইকিলিকসের মাধ্যমে বড় পরিসরে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছিল।
ট্রাম্প এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর গ্যাবার্ডের প্রশংসা করে বলেন, ‘তুলসি এখন কক্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দারুণ কাজ করেছো, তুলসি!’
ডেমোক্রেটদের প্রতিক্রিয়া
ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা দ্রুত এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটি তথ্যগতভাবে ভুল এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত। সিনেট গোয়েন্দা কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট মার্ক ওয়ার্নার এক্স (আগে টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘গ্যাবার্ডের দায়িত্ব ছিল গোয়েন্দা মহলকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা। অথচ তিনি আবারও সেই দায়িত্বকে ব্যবহার করছেন নির্বাচনি ষড়যন্ত্র ছড়াতে।’
সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত
ট্রাম্প প্রশাসনের নিযুক্ত সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফের নির্দেশে সম্প্রতি আবারও গোয়েন্দা মূল্যায়ন পর্যালোচনা করা হয়। এরপর র্যাটক্লিফ সাবেক সিআইএ পরিচালক জন ব্রেনানকে বিচার বিভাগের হাতে তুলে দেন তদন্তের জন্য। একইসঙ্গে সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকেও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প মঙ্গলবার আরও অভিযোগ করেন, ‘ওবামা ছিলেন এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা।’ একইসঙ্গে তিনি হিলারি ক্লিনটন, কোমি ও জেমস ক্ল্যাপারসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ‘অপরাধী’ আখ্যা দেন।
তবে আইন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ের সিদ্ধান্তের জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতিদের বিচার করা যায় না বলে সর্বোচ্চ আদালতের রায় রয়েছে।
সূত্র: এপি।
রাকিব