
ছবি: সংগৃহীত
বোয়িং ৭৮৭-ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার চার দিন পর এয়ার ইন্ডিয়ার ১১২ জন পাইলট চিকিৎসাজনিত ছুটিতে যান বলে জানিয়েছেন ভারতের কনিষ্ঠ বিমান পরিবহন মন্ত্রী মুরলিধর মোহল। তিনি বৃহস্পতিবার সংসদে জানান, আহমেদাবাদে মাঝআকাশে ইঞ্জিন থ্রাস্ট হারিয়ে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২ কিমি দূরে একটি ছাত্রাবাস ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৭৪ জন নিহত হন।
মন্ত্রী জানান, ঘটনার দিনই ৫১ জন কমান্ডার এবং ৬১ জন ফ্লাইট অফিসার ছুটির আবেদন করেন। তিনি বলেন, এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে, পাইলটদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যথাযথ মনোযোগ ও ব্যবস্থাপনা জরুরি — বিশেষ করে দুর্ঘটনার পর।
লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে মোহল বলেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এয়ারলাইন্সগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয় যাতে তারা চিকিৎসা পরীক্ষার সময় পাইলটদের মানসিক স্বাস্থ্য নিরীক্ষার জন্য “দ্রুত ও কার্যকর পদ্ধতি” চালু করে।
তিনি আরও জানান, ফ্লাইট ক্রু ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের (ATCOs) জন্য সম্ভাব্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় “স্বতন্ত্র ও উপযোগী প্রশিক্ষণ মডিউল” চালু করতে এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
এছাড়া, সহকর্মী-ভিত্তিক সহায়তা গ্রুপ গঠন করে পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের এমন সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও মোকাবেলায় সাহায্য করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এদিকে, এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ক্রুদের ক্লান্তি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নিরাপত্তা মান লঙ্ঘনের অভিযোগে বুধবার ডিজিসিএ (ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) থেকে চারটি শোকজ নোটিশ পেয়েছে তারা।
এই নোটিশগুলো গত এক বছরে এয়ার ইন্ডিয়ার স্বেচ্ছামূলকভাবে জমা দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাঠানো হয়েছে। এগুলোতে ক্যাবিন ক্রুদের বিশ্রাম সময়, প্রশিক্ষণ নিয়মনীতি, এবং অপারেশনাল প্রটোকলের লঙ্ঘনের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা এসব নোটিশ পেয়েছি এবং তা স্বীকার করছি। এগুলো গত এক বছরে আমাদের স্বেচ্ছায় জমা দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাঠানো হয়েছে। আমরা যথাযথভাবে জবাব দেব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের ক্রু ও যাত্রীদের নিরাপত্তার প্রতি সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
উল্লেখযোগ্য যে, গত ৬ মাসে এয়ার ইন্ডিয়া ১৩টি নোটিশ পেয়েছে বিভিন্ন নিরাপত্তা লঙ্ঘন ও দুর্ঘটনার জন্য।
ধীরে ধীরে বাড়ছে দুর্ঘটনার তালিকা
-
মঙ্গলবার হংকং থেকে দিল্লিগামী একটি এয়ারবাস A321 বিমানের অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিটে (APU) আগুন ধরে যায়। ঘটনাটি অবতরণের পর ঘটে এবং আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে। কেউ আহত হননি।
-
তার ২৪ ঘণ্টা আগেই দুটি পৃথক ঘটনা ঘটে—
-
কোচি-মুম্বাই ফ্লাইট রানওয়ে থেকে সরে যায়, এতে ইঞ্জিন কাভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
-
দিল্লি-কলকাতা ফ্লাইট ঠিক টেকঅফের মুহূর্তে উড্ডয়ন বাতিল করে।
-
-
বৃহস্পতিবার সকালে একই রকম আরেকটি ঘটনা ঘটে: দিল্লি-মুম্বাই এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট স্পিড মনিটর স্ক্রিনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় টেকঅফ বাতিল করে।
এ সবকিছুর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনা, যা উড্ডয়নের ৩২ সেকেন্ড পরই বিধ্বস্ত হয়।
ফুয়েল সাপ্লাই সুইচ কি ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করা হয়েছিল?
দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিমানের দুইটি ফুয়েল সাপ্লাই সুইচ ‘RUN’ থেকে ‘CUTOFF’ অবস্থানে চলে যায়, যার ফলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।
এই সুইচগুলো সাধারণত ভুলবশত ছোঁয়া গেলেও বন্ধ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি সুইচ বন্ধ হয়ে যায় — যা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে কিনা, সে নিয়ে মিডিয়ায় জল্পনা শুরু হয়।
এ নিয়ে পাইলটদের শেষ কথোপকথনের একটি অংশ সামনে আসে, যেখানে একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করেন, "তুমি কি ফুয়েল সাপ্লাই বন্ধ করেছো?" আর উত্তরে আরেকজন বলেন, "না"।
এই অনিরীক্ষিত অডিও এবং মিডিয়া রিপোর্টকে ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (AAIB) এবং সরকার উভয়েই “ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে আখ্যা দিয়েছে।
বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এই রিপোর্ট প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB) — যারা এই তদন্তে ভারতকে সহায়তা করছে — তারাও এই মিডিয়া কভারেজের সমালোচনা করেছে।
বোয়িং জেটগুলোতে সতর্কতা ও পরীক্ষা
এই ঘটনার পর সকল এয়ারলাইন্সকে নির্দেশ দেওয়া হয় যেন তারা বোয়িং বিমানের ফুয়েল সাপ্লাই সুইচ পরীক্ষা করে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, তারা ইতোমধ্যেই পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং কোনও সমস্যা পায়নি।
আবির