
ছবি: সংগৃহীত
গত মাসে ইরানের সঙ্গে টানা ১২ দিনের সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিজেদের বিজয়ী হিসেবেই দাবি করছে ইসরাইল। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একাধিক ইরানি সামরিক কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাতেও হামলা চালানো হয়। এসব ঘটনাকে নিজেদের “বড় সাফল্য” বলে দেখছে তেল আবিব।
তবে এ বিজয়ের মাঝেও ইসরাইলি নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন—যদি প্রয়োজন পড়ে, তারা আবারও সামরিক অভিযান চালাতে প্রস্তুত।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, “ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক চাপ ও আগ্রাসী নীতি থেকে আমরা এক চুলও পিছিয়ে আসব না।”
আলজাজিরার সঙ্গে কথা বলা বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইল ইরানকে স্থায়ীভাবে দুর্বল করে দিতে আরও বড় পরিসরে সংঘাতের সুযোগ খুঁজছে।
তবে এ ধরনের নতুন যুদ্ধের আগে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন লাগবে, আর ওয়াশিংটন সে অনুমোদন আদৌ দেবে কিনা—তা এখনো অনিশ্চিত।
আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, “বর্তমান যুদ্ধবিরতি কতটা কার্যকর হবে এবং কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান। তবে ইসরাইল আবারো আক্রমণ করলে, ইরান প্রস্তুত। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ইসরাইলের ভেতরেও গভীরভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।”
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুইনসি ইনস্টিটিউটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ত্রিতা পারসি মনে করেন, “ইসরাইল ইরানকে সিরিয়া বা লেবাননের মত একটি দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, যাতে ইচ্ছামত হামলা চালাতে পারে এবং কোনও জবাবদিহিতা না থাকে।”
তিনি আরও বলেন, ইউরোপ যদি আবার ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে তা ইসরাইলের জন্য আরেকটি যুদ্ধের সুবর্ণ সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।
চলতি জুলাইয়ের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
তারা একমত হন, আগস্টের মধ্যে যদি কোনো নতুন পারমাণবিক চুক্তি না হয়, তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পুরনো নিষেধাজ্ঞাগুলো আবারও কার্যকর করা হবে।
এ বিষয়ে পারসি বলেন, “ইউরোপীয়রা যদি এই পথে হাঁটে, ইরান হয়তো এনপিটি (পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ সংক্রান্ত চুক্তি) থেকে বেরিয়ে আসবে। আর সেটা হলে ইসরাইলের সামনে আবারও হামলার রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি হবে।”
ইসরাইলের রাইখম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান বিষয়ক অধ্যাপক মেয়ার জাবেদন ফার মনে করেন, “যদি বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ না থাকে যে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি পুনর্গঠন করছে, তাহলে প্রকাশ্য হামলা চালানো ইসরাইলের পক্ষে কঠিন হবে।”
তবে এসবের মাঝেই নিউইয়র্ক টাইমস গত বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “ইসরাইল এরই মধ্যে ইরানের অভ্যন্তরে নাশকতামূলক গোপন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।”
ইরান-ইসরাইল ১২ দিনের যুদ্ধ থামলেও উত্তেজনা থামেনি। বরং নতুন সংঘাতের ছায়া ঘন হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে। বিশ্ববাসীর প্রশ্ন—এই উত্তেজনার শেষ কোথায়?
শেখ ফরিদ