ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক রিপোর্টে চমক: মোবাইল মানির বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের আধিপত্য

প্রকাশিত: ১৪:১২, ২৬ জুলাই ২০২৫

আন্তর্জাতিক রিপোর্টে চমক: মোবাইল মানির বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের আধিপত্য

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালে বিশ্বের মোট দৈনিক মোবাইল মানি লেনদেনের প্রায় ৮.৬১ শতাংশ পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ, যা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)-এর মাধ্যমে ডিজিটাল আর্থিক সেবায় প্রবেশের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।

এই তথ্য উঠে এসেছে লন্ডনভিত্তিক গ্রুপ স্পেশাল মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন (GSMA) প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে, যার শিরোনাম "দ্য স্টেট অব দ্য ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্ট অন মোবাইল মানি ২০২৫"।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এমএফএস হিসাবের মাধ্যমে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪,৮৩৩ কোটি টাকা (প্রায় ৩৯৬.১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। একই বছরে বৈশ্বিকভাবে মোবাইল মানি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২.১ বিলিয়ন মোবাইল মানি অ্যাকাউন্ট থেকে দৈনিক প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লেনদেন পরিচালনা করেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, বাংলাদেশে মোট ২৩৮.৬৮ মিলিয়ন মোবাইল মানি অ্যাকাউন্ট ছিল, যা বৈশ্বিক মোট হিসাবের ১১.৩৬ শতাংশ।

যদিও দেশের প্রায় ৫৭ শতাংশ মানুষ এখনো আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে, তারপরও বাংলাদেশের এমএফএস কার্যক্রমের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি, বিশেষ করে বিকাশ-এর মতো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, GSMA রিপোর্টে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

ঋণের জন্য মোবাইল মানি ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ২০২৩ সালের ৭ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে দ্বিগুণ হয়ে ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০২১ সালে বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়া বিকাশের ডিজিটাল ঋণ সেবা, একটি প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহযোগিতায়, এ পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি গ্রাহককে প্রায় ৫৫ লাখ ঋণ প্রদান করেছে, যার মোট পরিমাণ প্রায় ২৮০০ কোটি টাকা।

একইভাবে, সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে মোবাইল মানির ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ২০২৩ সালের ৭ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ, বিকাশ অ্যাপে ৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একটি নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের (NBFI) সহায়তায় ৩২ লাখের বেশি ডেইলি পেমেন্ট সেভিংস (DPS) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

মোবাইল মানি প্ল্যাটফর্মে বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধের ব্যবহারেও ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে; ২০২৩ সালে যেখানে ৪ শতাংশ গ্রাহক বীমা পরিশোধ করতেন, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে। বিকাশ ২০২১ সালে তার প্ল্যাটফর্মে বীমা সেবা চালু করে, যার ফলে দুর্গম এলাকার মানুষরাও কোনো স্থানীয় অফিস ছাড়াই বীমা কোম্পানির সেবা নিতে পারছেন।

বিকাশের তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল মানি খাতে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান স্পষ্ট: বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ২.১৯ শতাংশ হলেও, বিকাশ বৈশ্বিক মোবাইল মানি ব্যবহারকারীর ৩.৮ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাপী এমএফএস এজেন্টের ৩.৫ শতাংশ পরিচালনা করছে।

বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী ও উদ্ভাবনী অবস্থান বজায় রেখেছে, যা বৈশ্বিক মোবাইল মানি ইকোসিস্টেমে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রমাণ।

 

তথ্যসূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

আবির

×