
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় কর্মরত সাংবাদিকদের অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিবিসি নিউজ, এএফপি, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এবং রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, গাজার সাংবাদিকরা এখন নিজেরা এবং তাঁদের পরিবারকে খাবার জোগাতে পারছেন না।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনেক মাস ধরে এই স্বাধীন সাংবাদিকরাই গাজার মাটিতে আমাদের চোখ ও কান হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন তারাই সেই একই দুর্দশার মুখোমুখি, যা তাঁরা সংবাদে তুলে ধরছেন।’
ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজায় বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার না থাকায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর নির্ভর করেই গাজার পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে।
গাজা এখন মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। এরই মধ্যে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধুমাত্র পুষ্টিহীনতার কারণে রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
একই সময়ে মেদসাঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের (MSF), সেভ দ্য চিলড্রেন ও অক্সফাম—এই তিনটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা তাদের এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, “আমাদের সহকর্মী এবং আমরা যাদের সাহায্য করি, তারা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছেন।”
অবরোধ, সাহায্যের পথ বন্ধ
চলতি বছরের মার্চের শুরুতে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। প্রায় দুই মাস বন্ধ রাখার পর আংশিকভাবে অবরোধ শিথিল করা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি—বরং আরও খারাপ হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গাজার প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষ-সদৃশ পরিস্থিতিতে রয়েছেন। সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধানম গেব্রিয়াসুস বলেন, ‘এটিকে অন্য কিছু বলে বোঝানো যায় না—এটি একটি মানবসৃষ্ট গণ-অনাহার।’
বিতর্কিত মানবিক সহায়তা পদ্ধতি ও সহিংসতা
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (GHF) নামে একটি বিতর্কিত মানবিক সহায়তা পদ্ধতি চালু করে। গত আট সপ্তাহে এই ফাউন্ডেশনের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতির দাবি
বিবিসি ও অন্যান্য সংবাদ সংস্থার বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বহু কষ্ট সহ্য করতে হয়, কিন্তু এখন তারা অনাহারের ঝুঁকিতেও রয়েছেন—এটি গভীর উদ্বেগজনক। আমরা আবারও ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, গাজায় সাংবাদিকদের প্রবেশ ও বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক এবং যথেষ্ট খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।’
ইসরায়েলের পাল্টা অভিযোগ
অন্যদিকে, গাজার প্রবেশ ও ত্রাণ নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরায়েল বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ‘হামাসের প্রপাগান্ডার সেবায় নিয়োজিত’।
সূত্র: বিবিসি।
রাকিব