
ছবি: সংগৃহীত।
সন্তানধারণ অনেক দম্পতির জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে নারী বা পুরুষের শরীরে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ থাকলে সন্তান জন্মদানে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু লক্ষণ অবহেলা করলে ভবিষ্যতে বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বাড়ে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
চলুন জেনে নিই নারী ও পুরুষ— উভয়ের দেহে কী কী লক্ষণ দেখা দিলে সন্তান ধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে করণীয় কী।
নারীর তিনটি বিপজ্জনক লক্ষণ
১. পেলভিকে (তলপেটে) দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
তলপেটে যদি সবসময় ব্যথা থাকে, বিশেষ করে তা যদি পায়খানার রাস্তায় ছড়ায়, তাহলে জরায়ুতে এন্ডোমেট্রিওসিস বা অন্য কোনো সমস্যা থাকতে পারে। এই ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত, নইলে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।
২. পুরুষের মতো লোম গজানো ও ওজন বেড়ে যাওয়া
মুখে লোম গজানো, ঘাড়, বগল কালো হওয়া এবং হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া — এগুলো পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)-এর লক্ষণ। এই রোগ নারীর হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যার ফলে পিরিয়ড অনিয়মিত হয় এবং গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়।
৩. অনিয়মিত পিরিয়ড চক্র
পিরিয়ড যদি ২১ দিনের আগে বা ৪০ দিনের পরে হয়, অথবা কয়েক মাস পর পর হয়, তাহলে হরমোনাল সমস্যা থাকতে পারে। বিশেষ করে এস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন, FSH ও LH-এর ভারসাম্য নষ্ট হলে ডিম্বাণু উৎপাদন ও মান খারাপ হয়ে যায়, যার ফলে গর্ভধারণ কঠিন হয়ে পড়ে।
পুরুষের তিনটি বিপদজনক লক্ষণ
১. ওজন বাড়া ও পেশির নমনীয়তা হারানো
তলপেটে চর্বি জমা, ওজন বৃদ্ধি এবং মাসেলস দুর্বল হয়ে যাওয়া স্পার্ম কোয়ালিটি কমিয়ে দেয়। এর সঙ্গে ক্লান্তি, স্ট্রেস ও যৌন আগ্রহ কমে যাওয়াও স্পার্ম উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. চুল পড়া ও দেহের লোম কমে যাওয়া
যদি মাথার চুল পড়ে, দাড়ি কমে যায় বা নারীর মতো শারীরিক গঠন দেখা দেয়, তাহলে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হতে পারে। এই হরমোনের ঘাটতি পুরুষের সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৩. অণ্ডকোষে ব্যথা ও যৌন সমস্যা
বিশেষ অঙ্গে ব্যথা অনুভব, ফোলা দেখা যাওয়া, অথবা যৌন দুর্বলতা থাকলে, তা স্পার্মের গঠন বা গতির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এই সমস্যাগুলো চিকিৎসা না করলে সন্তান জন্মদানে সমস্যা হয়।
সমাধান ও করণীয়
🔹 নারীদের জন্য:
-
পিরিয়ড অনিয়মিত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
-
তিন মাস আগে থেকেই ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন ডি, ই খাওয়া শুরু করুন
-
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন, ব্যায়াম করুন, পর্যাপ্ত ঘুম ও পানি পান করুন
🔹 পুরুষদের জন্য:
-
৬ মাস নিয়মিত চেষ্টার পরেও স্ত্রী গর্ভধারণ না করলে সিমেন এনালাইসিস করান
-
ধূমপান, মদ্যপান ও মাদক পরিহার করুন
-
রাতে ভাত বাদ দিয়ে শাকসবজি, ডিম, বাদাম, মাছ ইত্যাদি খান
-
ভিটামিন ই, ডি, জিঙ্ক ও মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করতে পারেন
নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরেই কিছু পরিবর্তন বা লক্ষণ ভবিষ্যতের গর্ভধারণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সময়মতো সচেতন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণই সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধির চাবিকাঠি।
নুসরাত