
ছবি: সংগৃহীত।
আপনার শিশুটি এখন ৬ মাসে পা দিয়েছে—এটি তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ সময় শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশে আসে লক্ষণীয় পরিবর্তন। চিকিৎসকদের মতে, এই সময়ে সঠিক পুষ্টি, পর্যাপ্ত ঘুম এবং যথাযথ যত্ন শিশুর ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে তোলে।
জাতীয় পুষ্টি পরিষদ জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ শিশু ছয় মাসে পৌঁছায়, কিন্তু অনেক অভিভাবক এই বয়সে শিশুর প্রয়োজনীয় যত্ন সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত নন।
শারীরিক বৃদ্ধি:
* গড় ওজন: ৬.৫–৮.৫ কেজি
* গড় দৈর্ঘ্য: ৬৪–৬৮ সেন্টিমিটার
* মাথার পরিধি: ৪১–৪৪ সেন্টিমিটার
চিকিৎসকরা বলছেন, এই সময়ে শিশুর ওজন জন্মের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
শিশু বিশেষজ্ঞরা জানান,
"৬ মাস বয়সে শিশুরা বসার চেষ্টা করে, কিছুটা হামাগুড়ি দেয় এবং হাত বাড়িয়ে জিনিস ধরার চেষ্টা করে। এটি তার স্নায়ুবিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।"
সম্পূরক খাবার চালু করার সময়:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, ৬ মাস বয়সে শুধুমাত্র বুকের দুধ যথেষ্ট নয়। এই সময় থেকে ধাপে ধাপে সহজপাচ্য, ঘরে তৈরি সম্পূরক খাবার দিতে হবে।
প্রস্তাবিত খাবার:
* ভাত-মসুর ডাল মিশ্রণ
* আলু বা কুমড়ার ম্যাশ
* চালের গুঁড়ো ও দুধের ক্ষুদ্র পরিমাণ খাবার
* প্রতিদিন ২–৩ বার খাওয়ানোর পরামর্শ
মানসিক ও ভাষাগত বিকাশ:
* মা-বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দের প্রতিক্রিয়া
* হাসে, চিৎকার করে নিজের অনুভূতি জানায়
* খেলনা ধরতে ও মুখে নিতে চেষ্টা করে
স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা:
এই সময় শিশুকে ৬ মাস বয়সী টিকা (হেপাটাইটিস বি, পোলিও, হিব) দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং ওজন নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
সতর্কতা:
* শিশুর মুখে ছোট বস্তু যেন না যায় তা নিশ্চিত করুন
* দীর্ঘ সময় একা ফেলে রাখা যাবে না
* মাথায় শক্ত আঘাত বা উচ্চ জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
৬ মাস বয়স শিশুর একটি টার্নিং পয়েন্ট। এই সময় সঠিক পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিশুর ভবিষ্যৎ বিকাশ নিশ্চিত করা যায়। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ এবং ভালোবাসা ও যত্নই পারে শিশুর সুন্দর ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে তুলতে।
মিরাজ খান