
ইজেকশন জীবন বাঁচানোর জরুরি প্রক্রিয়া
যুদ্ধবিমান চালানো একাধারে গর্বের, আবার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। যখন কোনো যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার মুখে পড়ে বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন পাইলট ‘ইজেকশন সিট’ ব্যবহার করে নিজেকে বিমান থেকে উৎক্ষেপণ করেন।
মুহূর্তেই আকাশে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা তখন পাইলটের একমাত্র ভরসা ‘ইজেকশন সিট’। ইজেক্ট বা ইজেকশনের মাধ্যমে বিমান থেকে নিজেকে বের করে প্রাণ বাঁচানো গেলেও, শরীরে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে মেরুদণ্ডে আঘাত, পিঠে তীব্র ব্যথা, এমনকি পঙ্গুত্ব পর্যন্ত হতে পারে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে প্রশিক্ষিত মেরুদণ্ড বিশেষজ্ঞ ডা. এ. কে. ঘোরির ভাষায়, ইজেকশন মানেই যুদ্ধের এক নতুন অধ্যায়, যেখানে জীবন ফিরে পেলেও শুরু হয় দীর্ঘ পুনর্বাসনের লড়াই।
যখন কোনো যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার মুখে পড়ে বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন পাইলট ‘ইজেকশন সিট’ ব্যবহার করে নিজেকে বিমান থেকে উৎক্ষেপণ করেন। এটি পাইলটকে বিমান থেকে উচ্চগতিতে উপরের দিকে ছুঁড়ে ফেলে এবং পরে প্যারাসুটের সাহায্যে তাকে মাটিতে নামিয়ে আনে। যদিও এই প্রক্রিয়া প্রাণরক্ষা করে, কিন্তু শরীরে প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে।
ইজেকশন সিটের কাজ
প্রাক্তন এয়ার ফোর্স ফাইটার লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিট স্মিথ বলেন, যখন পাইলট দুর্ঘটনার কারণে ইজেকশন সিটের হ্যান্ডেল টানেন, সঙ্গে সঙ্গে বিমান থেকে ককপিটের ক্যানপি মুক্ত হয়। এরপর আসনের নিচে থাকা রকেট শক্তিশালী গতিতে পাইলটকে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ ফুট উঁচুতে ছুঁড়ে ফেলে। এই উত্তোলনের সময় শরীর ১৪ থেকে ১৬ গুণ বেশি গ্র্যাভিটির (G-force) চাপ সহ্য করে। এটি এমন এক জোরালো ধাক্কা, যা অনেক পাইলটের মেরুদণ্ডে আঘাত এবং ফাটল সৃষ্টি করে।
রকেট চালু হওয়ার পর সিটের সেন্সর নির্ধারণ করে প্যারাসুট কখন খোলা হবে উচ্চতা বেশি হলে অপেক্ষা করে প্যারাসুট খোলে, আর নিচু উচ্চতায় তৎক্ষণাৎ খোলা হয়। প্যারাসুট খোলার পরে আসন থেকে পাইলট মুক্ত হয় এবং মাটিতে নামার প্রস্তুতি নেয়। তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটে।
নিম্ন উচ্চতায় ইজেকশন বেশি বিপজ্জনক
যদি পাইলট নিচু উচ্চতা থেকে ইজেক্ট করেন, তখন প্যারাসুট খোলার জন্য যথেষ্ট সময় থাকে না। ফলে মাটিতে পড়ার গতি কমানো সম্ভব হয় না। এতে ‘বার্স্ট ফ্র্যাকচার’ বা ভয়াবহ কশেরুকা ভেঙে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরণের ফ্র্যাকচারে মেরুদণ্ড অস্থির হয়ে পড়ে পাইলট দাঁড়াতে পারেন না, হাঁটতে পারেন না, এমনকি পা অবশ হয়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ সময় নিম্ন উচ্চতায় ইজেকশন করলে পাইলট মারা যায়। আর যদি সে বেঁছে থাকে তাহলে সার্জারি দরকার হয় এবং পুরোপুরি সেরে উঠতে হয়তো বছরখানেক পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
পাইলটদের ইজেকশন মুহূর্তে সময় থাকে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের সিদ্ধান্ত নিতে হয় তখনই, বাঁচার তাগিদে। ইজেকশনের পর শরীর যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যায়, তা হয়তো সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
তাসমিম