
ছবি: প্রতীকী
প্রতিদিনের জীবনে আমরা যতটা সম্ভব ব্যস্ত থাকতে চাই। অফিসের কাজ, বাসার দায়িত্ব, পড়াশোনা, সামাজিক দায়িত্ব—সবকিছু মিলিয়ে যেন দিনগুলো একের পর এক দৌড়ে চলে যায়। আমরা ভাবি, যত বেশি কাজ করব, তত বেশি সফল হবো। আর কাজ না করলেই যেন সময়টা নষ্ট হয়। কিন্তু এই ভাবনার মাঝে আমরা ভুলে যাই বিশ্রামের গুরুত্ব। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে আমরা অনেক সময় কাজ জমিয়ে রাখি এই ভেবে যে, ‘আজ তো সময় আছে, সব কাজ গুছিয়ে ফেলি।’ অথচ ছুটির দিনে পুরোপুরি বিশ্রাম নেওয়াটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং দরকারি কাজ। এটা কোনোভাবেই অলসতা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে এটা আমাদের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ায়।
মানবদেহ কোনো যন্ত্র নয়, যে একটানা কাজ করতে পারবে। মস্তিষ্কেরও বিশ্রাম দরকার, যেমনটা দরকার শরীরের। দিন-রাত পরিশ্রম করে যাওয়ার ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, মনেও তৈরি হয় হতাশা আর বিরক্তি। তখন কাজ করলেও সেটা ঠিকভাবে হয় না। ভুল হয়, মনোযোগ থাকে না, ফলাফলও সন্তোষজনক হয় না। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন হয় একটুখানি নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়। আর ছুটির দিন সেই সময়টা পাওয়ার উপযুক্ত সুযোগ।
যখন আমরা ছুটির দিনে কাজ না করে পুরো সময়টা বিশ্রামে কাটাই, তখন আমাদের শরীর-মনের উপর এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন, ভালো ঘুম হলে মন ফুরফুরে থাকে, কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। প্রিয় বই পড়া, প্রিয় গান শোনা, প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো—এসব ছোট ছোট আনন্দ আমাদের মনকে প্রশান্ত করে। ফলে পরের কর্মদিবসে আমরা আরও শক্তি আর উদ্যম নিয়ে কাজে ফিরতে পারি।
ছুটির দিন যদি শুধু কাজের চাপেই কেটে যায়, তাহলে সেটা আর কোনো ছুটি থাকে না। তাহলে মানসিকভাবে কাজ থেকে দূরে থাকা যায় না, আর ক্লান্তিও দূর হয় না। যে কারণে উৎপাদনক্ষমতা বাড়ার বদলে আরও কমে যায়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বিরতিতে বিশ্রাম নেয় বা ছুটির দিনে নিজেদের মতো করে সময় কাটায়, তারা বেশি ফোকাসড থাকে, কম ভুল করে, আর কাজের মানও ভালো হয়।
বিশ্রাম মানে শুধু শুয়ে থাকা নয়, বরং নিজের পছন্দের কাজ করা, মানসিক প্রশান্তি পাওয়া, যেটা আপনাকে ভালো লাগায় ভরিয়ে দেয়। কেউ ঘুরতে যেতে পছন্দ করে, কেউ সিনেমা দেখে, কেউবা স্রেফ পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেয়। এসব কিছুই বিশ্রামের অংশ, এবং এগুলোর মাধ্যমে আমরা মানসিক শক্তি ফিরে পাই। তাই কেউ যদি বলে যে, “আজ কিছুই করিনি, শুধু বিশ্রাম নিয়েছি”—তাকে অলস ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং বলা যায়, সে নিজের শরীর ও মনের যত্ন নিয়েছে, যা অনেক সময় আমাদের ব্যস্ত জীবনে উপেক্ষিত থাকে।
একটা ফোনও সারাদিন ব্যবহার করলে চার্জ শেষ হয়ে যায়, তখন সেটাকে চার্জে দিতে হয়। আমরা নিজের শরীর আর মনকে সেই ফোনের চেয়েও কম গুরুত্ব দিই অনেক সময়। অথচ আমরা জানি, চার্জ ছাড়া কোনো ডিভাইস যেমন চলতে পারে না, তেমনি বিশ্রাম ছাড়া মানুষও ঠিকভাবে চলতে পারে না। তাই নিজেকে চার্জ দেওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো ছুটির দিন। সেই সময়টুকুতে যদি আমরা নিজেকে সময় দিই, কোনো কাজ না করে শুধু আরাম করি, তাহলে সেটা আসলে ভবিষ্যতের কাজের জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি।
এজন্যই বলা হয়, ছুটির দিনে কাজ না করে বিশ্রাম নেওয়াটাও একধরনের প্রোডাক্টিভিটি। এটা আপনার সামগ্রিক জীবনের গতি ঠিক রাখে, আপনাকে ক্লান্তি থেকে মুক্ত করে, এবং নতুন করে জীবনের চাকা ঘোরাতে সাহায্য করে। বিশ্রাম যেন আমাদের অপরাধবোধে না ভোগায়, বরং সেটাকে যেন আমরা প্রয়োজনীয় একটি অংশ হিসেবে গ্রহণ করি— এই মনোভাবই আমাদের আরো কর্মক্ষম, আনন্দিত ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে পারে।
এম.কে.