
সেল্ফ কেয়ার বা আত্ম-যত্ন মানেই শুধু বাথটাবে বা ফেসমাস্ক নয়, এটি মন ও মনের সুস্থতার যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সেল্ফ কেয়ার দিবস উপলক্ষে নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করাই যথেষ্ট: "আজ আমার মনের কী ধরনের যত্ন দরকার?" মানসিক যত্নের কিছু সহজ অভ্যাস রয়েছে যা কোনো খরচ ছাড়াই, অল্প সময়ে, এবং ব্যস্ত দিনের মধ্যেও মানসিক শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। নিচে এমনই ১০টি মানসিক সেল্ফ কেয়ার অভ্যাস তুলে ধরা হলো:
১. দিনের শুরু হোক একটিমাত্র সদয় চিন্তা দিয়ে
সকালে ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া চেক করার আগে মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ভাবুন—“এ পর্যন্ত আসতে পারা নিজেই একটা সাফল্য।” এই ছোট্ট সচেতন মুহূর্ত মস্তিষ্ককে জানিয়ে দেয়: আপনি গুরুত্বপূর্ণ।
২. দুপুরবেলা নিজেকে প্রশ্ন করুন
শরীরের ক্ষুধা মেটালেও মানসিক ক্ষুধার খোঁজ রাখি ক’জন? দুপুরে একটু থেমে দুটি গভীর শ্বাস নিন ও নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, “আমি এখন কেমন অনুভব করছি?” ক্লান্ত? অনিশ্চিত? কৃতজ্ঞ? বিচার না করে শুধু অনুভব করুন এবং একটি ছোট কাজ করুন যেমন বন্ধুকে বার্তা পাঠান বা শান্ত কিছু পড়ুন।
৩. একটি “ব্রেইন ডাম্প” অভ্যাস গড়ে তুলুন
দিন শেষে কাগজ বা ফোনে মনের সব চিন্তা, উদ্বেগ, স্মরণীয় কথা, অনুশোচনা সব লিখে ফেলুন। সম্পাদনার দরকার নেই। এতে মনে হবে মাথা যেন হালকা হলো। ঘুম সহজ হবে, কারণ আপনি জানেন মনের চিন্তাগুলো কোথাও সুরক্ষিত।
৪. একটি আরামদায়ক স্মৃতি মনে করুন
মানসিক সুস্থতা শুধু চাপ সামলানো নয় উষ্ণতা লালন করাও বটে। চোখ বন্ধ করে এমন একটি মুহূর্ত মনে করুন যা হৃদয়কে আনন্দ দিয়েছিল যেমন বন্ধুর সঙ্গে হাসির মুহূর্ত, প্রিয় খাবার উপভোগ, বা একটি সূর্যাস্ত দেখা। স্মৃতির সেই উষ্ণতা আপনাকে নতুনভাবে প্রশান্তি দেবে।
৫. পরিবেশ পরিবর্তন করুন
যেতে না পারেন কোথাও দূরে, অন্তত জানালার ধারে দাঁড়ান, বারান্দায় যান বা বাইরে একটু হাঁটুন। প্রকৃতির স্পর্শ, কিছু সবুজ, বা সূর্যের আলো মনের অস্থিরতা কমিয়ে মনকে নতুন উদ্দীপনা দিতে পারে।
৬. একটি “পজ ফ্রেজ” তৈরি করুন
আপনার মন যদি "কি ভুল করলাম?" বা “কি হবে?” ধরনের চিন্তায় ঘুরপাক খায়, তখন বলুন “এটা এখনই ভাবার দরকার নেই” অথবা “এটা থামাও।” এই ছোট বাক্য আপনাকে মানসিক স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া থেকে বের করে এনে বর্তমান মুহূর্তে ফিরিয়ে আনবে।
৭. একটি ছোট্ট সৃজনশীল কাজ করুন
সৃজনশীল হতে পেইন্টিং জানতেই হবে না। কাগজ ভাঁজ করে উড়ন্ত বিমান বানানো, কোলাজ তৈরি করা, বা রেসিপি ছাড়া কিছু রান্না করা এসবই মনকে খেলাধুলার মতো স্বাধীনতা দেয়। মস্তিষ্ক অনুভব করে এটি শুধু চিন্তা করার জন্য নয়, উপভোগ করার জন্যও তৈরি।
৮. একটি নেতিবাচক উৎস সীমিত করুন
এদিন একটি মাত্র জিনিস বেছে নিন সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত স্ক্রলিং, নেতিবাচক খবর পড়া, বা কাউকে কড়া ইমেইলের কথা মনে করা। পরিবর্তে একটি পজিটিভ বিকল্প বেছে নিন প্রিয় ছবি দেখা, একটি অনুপ্রেরণামূলক পডকাস্ট শোনা বা তিন মিনিটের স্ট্রেচ।
৯. নিজেকে একটি প্রশংসা দিন
নিজের প্রতি সদয় হওয়াও মানসিক সেল্ফ কেয়ারের অংশ। নিজেকে বলুন “আজ কঠিন ফোন কলটা সুন্দরভাবে সামলেছি” অথবা “আমি অনেকদূর এসেছি।” এমন ছোট ছোট প্রশংসা আত্মবিশ্বাস ও আত্ম-মর্যাদা বাড়ায়।
১০. ঘুমের আগে একটি ছোট সীমা নির্ধারণ করুন
রাতের ঘুম যদি ব্যস্ত চিন্তায় ভরে যায়, তবে একটি সহজ নিয়ম স্থির করুন: “রাত ৮টার পর আর কোনো ইমেইল নয়” অথবা “লাইট বন্ধ করার আগে ১০ মিনিট ফোন ছাড়া থাকব।” এমন ছোট সীমাবদ্ধতা ঘুমকে স্বস্তিদায়ক ও মনকে প্রশান্ত রাখে।
এই অভ্যাসগুলোর জন্য কোনো স্পা বা ব্যয়বহুল পণ্য দরকার হয় না। শুধু দরকার নিজেকে উপলব্ধি করার মানসিক প্রস্তুতি। নিজের মনকে শুনুন, তার চাহিদার প্রতি সদয় হোন। সেল্ফ কেয়ার কখনও আত্মকেন্দ্রিকতা নয়, এটি টিকে থাকার ভিত।
আজ কিংবা আগামীকাল এই দশটি অভ্যাস থেকে দু-তিনটি চেষ্টা করুন। কোনটি ভালো লাগে তা লক্ষ্য করুন। সফল হলে নিজেকে প্রশংসা করুন, ভুলে গেলেও আবার শুরু করুন। কারণ প্রতিটি চেষ্টাই নিজের মনের জন্য একেকটি উপহার।
Jahan