
ছবি: সংগৃহীত
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশু নিহতের ঘটনায় জাতি গভীর শোক ও ক্ষোভে নিমজ্জিত—এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। আজ মঙ্গলবার বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই ঘটনার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরেন।
তিনি লেখেন, “ঢাকার আকাশে যখন আগুনের শিখা জ্বলে উঠে শিশুকণ্ঠকে নিস্তব্ধ করে দিল, মনে হল যেন সম্পূর্ণ জাতি এগিয়ে গেল। এক মুহূর্তে আলো নিভে গিয়ে চার দিক ঘন কালো অন্ধকার।”
তিনি বলেন, ক্লাসরুমে বসে যারা আগামীকালের স্বপ্ন আঁকছিল, তারা আজ বিবর্ণ ছবি হয়ে গেছে। “কারও কারও সেই আশ্রয়ও আর নেই। শহরের বাতাস জুড়ে আজও কেঁদে বেড়াচ্ছে তাদের অসমাপ্ত গান।”
হাজ্জাজের মতে, এই ঘটনায় জন্ম নেওয়া শূন্যতা কোনো পরিসংখ্যানে পূরণ হওয়ার নয়।
ঘটনার পরের দিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও উত্তাল আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মৃত্যুর ওই গরম ভস্ম ঠান্ডা হওয়ার আগেই ২২ জুলাই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ‘জবাব চাই’ স্লোগানে মুখর হয়। পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে তারা মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে হাঙ্গামার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন ও শিক্ষা-উপদেষ্টা দুজনকেই ৯ ঘণ্টার বেশি আটকে রাখে।”
তিনি উল্লেখ করেন, শিক্ষার্থীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান নেয়, এবং শেষ পর্যন্ত উপদেষ্টাদের পুলিশি পাহারায় বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেদিন সচিবালয়গামী অন্য একটি বিক্ষোভ নিয়েও মন্তব্য করেন এনডিএম চেয়ারম্যান। “পুলিশ ও র্যাবের সাউন্ড-গ্রেনেড, লাঠিচার্জ আর টিয়ার-শেলে ছত্রভঙ্গ হয় সেই মিছিল; সরকারি গাড়ির কাচ ভাঙে ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়ে পড়ে থাকে ফুটপাথে—রাজপথ যেন পাহাড়ি ঢল।”
রাজনৈতিক সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, “১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির জনসভায় হঠাৎ গুলি আর বোমার ধোঁয়া—নিহত চার, আহত এক ডজনের বেশি। ধসে পড়া ব্যারিকেডের মধ্যে জনতার ছুটোছুটি, পুলিশের লাঠিচার্জ, রক্ত, কান্না—সব মিলিয়ে যেন ১৯৭০-এর শেষ দিকের পুরনো ছবির পুনরাবৃত্তি।”
বর্তমান সরকারের এক বছরের ব্যর্থতা তুলে ধরে হাজ্জাজ বলেন, “ইউনূস-নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে, কিন্তু অগ্রগতির খাতা শূন্য। শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমেছে, বিনিয়োগে ভাটা।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি এমনই চলে, আইন-শৃঙ্খলা আর অর্থনীতি দুই-ই সমান্তরালে দরপতন ঘটাবে… ‘ফেল্ড স্টেট’ তকমা যেন অচিরেই গায়ে না লাগে।”
ইতিহাসের ভয়াবহ পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “১৭৯৪-এর থার্মিডোরের গল্প, ১৯১৭ সালের পেত্রোগ্রাদ কিংবা ১৯৭৪-এর ইথিওপিয়া—সবই বলে, অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব যদি দৃঢ় নীতি, স্পষ্ট রোডম্যাপ আর আইনের শাসন দিতে না পারে, তবে শূন্যস্থান দখল করবে চরমপন্থী, সেনাশাসক কিংবা পুরনো ক্ষমতালোভীই।”
তার মতে, “আজ ঢাকার রাস্তায় যে উত্তপ্ত ধোঁয়া উঠছে, সেটি তারই হুঁশিয়ারি: সময় আর বেশি নেই।”
সমাধানের পথ হিসেবে ববি হাজ্জাজ তিনটি সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেন:
১. দ্রুত নির্বাচন:
“নির্বাচনকালীন সীমিত সময়ে সেনাবাহিনীকে নিরপেক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দিতে হবে। যেন প্রশাসনে দলীয় প্রভাব ঠেকানো যায়।”
২. অস্ত্রধারী রাজনীতি বন্ধ:
“সব ছাত্র-যুব অস্ত্রধারী সংগঠনের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করতে হবে এবং অপরাধী যেই হোক, জরুরি ট্রাইব্যুনালে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
৩. অর্থনৈতিক সহায়তা:
“ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের পরিবার ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য বাজেট পুনর্বিন্যাস করে নগদ সহায়তা দিতে হবে।”
স্ট্যাটাসের শেষভাগে তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন,
“আজ যদি আমরা প্রতিজ্ঞা-পোকার মতো টলোমলো সিদ্ধান্তে ঘুরতেই থাকি, তবে হয়তো সকালের ঢাকা-শহরেই একদিন নতুন ‘থার্মিডোর’ নেমে আসবে—অভ্যন্তরীণ শত্রু নিয়েই। কিন্তু যদি আমরা সাহসী হই, দ্রুত ভোট আর শৃঙ্খলা-সম্মতির পথে এগোই, তবে মাইলস্টোনের ধ্বংসস্তূপের ছোট্ট হাতগুলো আবার খাতা-কলম ধরবে, আর গণতন্ত্রের বাতি নিভবে না।”
তিনি স্পষ্ট করে দেন—“সিদ্ধান্ত এখনই দরকার—রাস্তাই আমাদের সামনে খুলে দেবে ভবিষ্যতের সীমানা।”
আবির