
ছবি: সংগৃহীত
রাত জাগার বিষয়টি নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে, তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে রাত জাগার অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যদিও কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বা পেশার ক্ষেত্রে এর কিছু স্বল্পমেয়াদী সুবিধা থাকতে পারে, সামগ্রিকভাবে এর নেতিবাচক প্রভাবগুলোই বেশি।
রাত জাগার অপকারিতা
বেশিরভাগ গবেষণা রাত জাগার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে:
শারীরিক স্বাস্থ্যঝুঁকি: নিয়মিত রাত জাগলে হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে ঘন ঘন অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এছাড়াও, এটি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: ঘুমের অভাবে উদ্বেগ, অবসাদ, বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মেজাজ খিটখিটে হয় এবং বিরক্তি বাড়ে।
জ্ঞানীয় কার্যকারিতা হ্রাস: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা কমে যায়। কাজের উদ্যম হ্রাস পায় এবং ভুল করার প্রবণতা বাড়ে।
ত্বকের সমস্যা: নিয়মিত রাত জাগা ত্বকে ব্রণ, চোখের নিচে কালো দাগ, অকালে বয়সের ছাপ এবং ত্বক শুষ্ক করে তুলতে পারে।
হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত: ঘুমের অভাব হজম প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, বিশেষ করে অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া বা ভাজাপোড়া খেলে বদহজমের সমস্যা বাড়তে পারে।
রাত জাগার সম্ভাব্য উপকারিতা (সীমিত ক্ষেত্রে)
কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যাদের শরীরের প্রাকৃতিক ঘুম-জাগরণ চক্র (সার্কাডিয়ান রিদম) একটু দেরিতে সেট করা থাকে, তাদের জন্য কিছু সুবিধা পরিলক্ষিত হতে পারে। এদেরকে সাধারণত 'নিশাচর' বা 'নাইট আউল' বলা হয়।
সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা: কিছু গবেষণা ইঙ্গিত করে যে, রাত জাগা ব্যক্তিদের মধ্যে সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বেশি হতে পারে। রাতের শান্ত পরিবেশ অনেক সময় নিরবিচ্ছিন্ন চিন্তাভাবনার সুযোগ দেয়।
উৎপাদনশীলতা: দিনের বেলায় কাজ করার সময় যেসব বিঘ্ন (যেমন - নোটিফিকেশন, মিটিং, ইমেইল) আসে, রাতে সেগুলোর পরিমাণ কম থাকে। ফলে অনেক রাত জাগা ব্যক্তি রাতে বেশি মনোযোগী এবং উৎপাদনশীল হন।
মানসিক সতর্কতা: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিশাচর ব্যক্তিরা দিনের শেষ ভাগে তুলনামূলকভাবে বেশি মানসিক সতর্কতা বজায় রাখতে পারেন, যেখানে সকালে সক্রিয় ব্যক্তিরা দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত: ক্ষতির পাল্লাই ভারী
যদিও রাত জাগার কিছু সম্ভাব্য "উপকারিতা" থাকতে পারে, সেগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির তুলনায় খুবই নগণ্য। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পর্যাপ্ত এবং নিয়মিত ঘুমকে (সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা) সুস্থ জীবনযাত্রার একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। রাতের ঘুমের অভাব শরীরের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়।
যদি আপনার পেশাগত বা ব্যক্তিগত কারণে রাত জাগার প্রয়োজন হয়, তবে দিনের বেলায় পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা উচিত। তবে, এটি সবসময় সম্ভব হয় না এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতেই পারে।
সাব্বির