
ছবি: সংগৃহীত
কেমোথেরাপি না নেওয়ায় ও বিকল্প চিকিৎসার ওপর ভরসা রাখায় যুক্তরাজ্যে ২৩ বছর বয়সী পলোমা শেমিরানি নামের এক নারী ক্যান্সারে মারা গেছেন। এই ঘটনা সম্পর্কে একটি তদন্ত শুনানিতে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে নন-হজকিন লিম্ফোমা ধরা পড়ার পর পলোমা চিকিৎসকের কাছে জানিয়েছিলেন যে তিনি ‘অন্যান্য চিকিৎসার পদ্ধতি বিবেচনা করতে চান’ এবং কেমোথেরাপি থেকে বিরত ছিলেন। পলোমার ভাই গ্যাব্রিয়েল ও সেবাস্তিয়ান দাবি করেন, এই সিদ্ধান্তে তাদের মা কেয়েট শেমিরানির বিশ্বাস ও প্রভাব ছিল। তবে কেয়েট তার মেয়ের মৃত্যুর দায়ে চিকিৎসকদের দোষারোপ করেন।
তবে মেইডস্টোন হাসপাতালে কনসালট্যান্ট হেমাটোলজিস্ট ড. অরুন্দোয়া মোহন তদন্ত শুনানিতে জানান, সাবেক নার্স কেয়েট তার মেয়ের ‘কেমোথেরাপি’ চিকিৎসা প্রত্যাখ্যানে প্রভাব ফেলছেন বলে তিনি চিন্তিত ছিলেন।
ড. মোহন বলেন, ‘আমি তার মায়ের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইনি কারণ তা তার জন্য সহায়ক হবে না বলে মনে করতাম।’
তদন্তে উপস্থিত আইনজীবী এলিসন হিউইট প্রশ্ন করেন, ‘মিসেস শেমিরানি পলোমাকে প্রভাবিত করছেন বলে কি সন্দেহ ছিল?’
ড. মোহন উত্তরে বলেন, “হ্যাঁ, ঠিক তাই।’ তিনি আরও জানান, কেয়েট তার মেয়ের ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ হতে চেয়েছিলেন এবং রক্তের রিপোর্টের কপি চাইছিলেন।
জানা যায়, কেয়েট শেমিরানি করোনাভাইরাস মহামারির সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা সংক্রান্ত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন। ২০২১ সালে নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (এনএমসি) তাকে নার্স হিসেবে প্রত্যাহার করে, কারণ তিনি কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছড়িয়েছিলেন যা জনসাধারণের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে বিবেচিত হয়।
তদন্ত শুনানিতে ড. মোহানের বিপরীতে কেয়েট বলেন, তার মেয়ের মেইডস্টোন হাসপাতালে চিকিৎসার অভিজ্ঞতা তার কথার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে।
কেয়েট আরও জানান, ড. মোহন বারবার পলোমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন কেমোথেরাপি প্রত্যাখ্যান করার পরেও।
ড. মোহন বলেন, ‘আমার কর্তব্য ছিল তাকে চিকিৎসা দেওয়া।’
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ড. মোহন পলোমাকে জানিয়েছিলেন, কেমোথেরাপি নিলে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ। তিনি জানান, প্রথমদিকে পলোমা চিকিৎসা নিয়ে কোনো সংশয় প্রকাশ করেননি। তিনি স্টেরয়েড ও পিইটি স্ক্যানের পরামর্শ দেন এবং পলোমা সম্মতি দেন। কিছু সময় পর পলোমা জানিয়েছিলেন যে তিনি চিকিৎসা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেননি এবং বিকল্প চিকিৎসার পথ অনুসন্ধান করতে চান।
এলিসন হিউইট ড. মোহানকে প্রশ্ন করেন, ‘পলোমার সিদ্ধান্তে কেউ প্রভাব ফেলেছে কিনা তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন?’ ড. মোহন বলেন, ‘সে খুবই আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিল, এটা তার নিজের সিদ্ধান্ত এবং সে কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়নি।’
এ ঘটনায় তদন্ত শুনানি এখনও চলছে।
সূত্র: বিবিসি।
রাকিব