ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

আগুনে পোড়া যমজ মেয়েদের আর্তনাদে কাঁপছে হাসপাতাল, মা-বাবার কান্নায় ভারী আকাশ

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ০১:৪৬, ২৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০১:৪৬, ২৪ জুলাই ২০২৫

আগুনে পোড়া যমজ মেয়েদের আর্তনাদে কাঁপছে হাসপাতাল, মা-বাবার কান্নায় ভারী আকাশ

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ভয়াবহ ঘটনায় আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে কুমিল্লার দুই যমজ বোনের শৈশব। চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা গ্রামের ছোট্ট সারিনা জাহান ও সাইবা জাহান এখন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। সারিনার শরীরের ৩০ শতাংশ এবং সাইবার ২০ শতাংশ অংশ দগ্ধ হয়েছে।

বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সামনে মেয়েদের অসহায় অবস্থার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা এয়াসিন মজুমদার ও মা আকলিমা আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে আকলিমা বলেন— "গেট পর্যন্ত গিয়েছিলাম... কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনে পুড়ে গেল আমার দুই মেয়ে। একজনের আজ অপারেশন হবে... দেশবাসী দোয়া করুন—আল্লাহ যেন আমার সন্তানদের বাঁচান!"

জানা গেছে, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে স্কুল ছুটির ঠিক আগে হঠাৎ একটি ছোট বিমান মাইলস্টোন স্কুলের ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের চিৎকারে কেঁপে ওঠে পুরো উত্তরার আকাশ।

চৌদ্দগ্রামের ব্যবসায়ী এয়াসিন মজুমদারের যমজ কন্যা সারিনা ও সাইবা তখন স্কুলের বারান্দায় ছিল। হঠাৎ আকাশ থেকে আগুন নেমে আসে এবং তাদের ছোট্ট শরীরে রেখে যায় দগ্ধতার ভয়াবহ চিহ্ন।

খবর পেয়েই পাগলের মতো দৌড়ে আসেন বাবা-মা। স্কুলে গিয়ে না পেয়ে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি দেখে ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানেই পান আগুনে পোড়া মেয়েদের ক্ষতবিক্ষত মুখ।

বাবা এয়াসিন জানান— "আমার মেয়েরা এক মুহূর্ত চুপ থাকছে না। ভয়ে কাঁপছে, বারবার চিৎকার করে উঠছে। তাদের হাত-পা ও পিঠ গভীরভাবে দগ্ধ হয়েছে। আজ একজনের অপারেশন করাতে হবে। আমি কিছুই করতে পারছি না... শুধু কাঁদছি আর দোয়া চাইছি। দেশবাসী, প্লিজ আমার মেয়েদের জন্য দোয়া করুন।"

সারিনা ও সাইবার মতো নিরীহ শিশুদের এভাবে আগুনে ঝলসে যাওয়া গোটা জাতির জন্য এক কলঙ্ক। মাইলস্টোনের সেই ভয়াবহ দিনের আগুন এখনো নিভেনি—জ্বলছে হাসপাতালের বিছানায়, জ্বলছে বাবার চোখে, আর প্রতিটি কুমিল্লাবাসীর বুকে।

নুসরাত

আরো পড়ুন  

×