
ছবি: সংগৃহীত
আধুনিক জীবনযাত্রা এবং পেশাগত কারণে দিনের দীর্ঘ সময় বসে থাকা এখন একটি সাধারণ অভ্যাস। ডেস্ক জব, কম্পিউটার ব্যবহার বা বিনোদনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে থাকাটা যেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যারা দিনে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বসে থাকেন, তাদের কিডনি নীরব বিপদের মুখে পড়ছে! এই অভ্যাস ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
কেন দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা কিডনির জন্য বিপজ্জনক?
১. রক্ত চলাচল কমে যাওয়া: দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়। কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ না পৌঁছালে তা তাদের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। কিডনি রক্ত পরিশোধনের কাজটি সঠিকভাবে করতে পারে না, যার ফলে বর্জ্য পদার্থ জমা হতে শুরু করে।
২. প্রদাহ বৃদ্ধি: গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে শরীরে প্রদাহের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এই দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কিডনির কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব: বসে থাকার অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির সাথে জড়িত। উচ্চ রক্তচাপ এবং অনিয়ন্ত্রিত রক্তে শর্করার মাত্রা উভয়ই কিডনি রোগের প্রধান কারণ। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
৪. স্থূলতা বৃদ্ধি: দীর্ঘ সময় বসে থাকলে শারীরিক কার্যকলাপ কমে যায়, যার ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। স্থূলতা নিজেই কিডনি রোগের একটি বড় ঝুঁকির কারণ, কারণ এটি কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে এবং তাদের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৫. ভিটামিন ডি-এর অভাব: বাইরে খোলা আলোতে শারীরিক কার্যকলাপের অভাব ভিটামিন ডি-এর অভাব ঘটাতে পারে। ভিটামিন ডি কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে কিডনির কার্যক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে।
আপনার কিডনিকে সুরক্ষিত রাখতে করণীয়:
যদি আপনার পেশা বা জীবনযাত্রার কারণে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়, তবে আপনার কিডনিকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু সহজ পদক্ষেপ নিতে পারেন:
নিয়মিত বিরতি নিন: প্রতি ৩০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা পর অন্তত ৫-১০ মিনিটের জন্য উঠে দাঁড়ান এবং হাঁটাহাঁটি করুন। অফিসের ভেতরেই কিছু সহজ স্ট্রেচিং বা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
সক্রিয় থাকুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি গতির শারীরিক কার্যকলাপ (যেমন – দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং) নিশ্চিত করুন।
স্ট্যান্ডিং ডেস্ক ব্যবহার: সম্ভব হলে স্ট্যান্ডিং ডেস্ক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন, যা আপনাকে বসে না থেকে দাঁড়িয়ে কাজ করার সুযোগ দেবে।
পর্যাপ্ত পানি পান: দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এটি কিডনিকে সচল রাখতে এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
সুষম খাদ্য: প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি পরিহার করে ফল, সবজি ও গোটা শস্য সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: আপনার রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করান।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস আপনার কিডনির জন্য নীরব হুমকি। সময়মতো এই অভ্যাস পরিবর্তন করে এবং সচেতন জীবনযাপন করে আপনার কিডনিকে সুস্থ রাখুন এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।
ফারুক