ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

সব ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে এমন কিছু খাবার

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ২৫ জুলাই ২০২৫

সব ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে এমন কিছু খাবার

ছবি: সংগৃহীত

একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। কোনো একটি একক খাবার সব ধরনের পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে পারে না, তাই বিভিন্ন ধরনের খাবার মিশিয়ে খাওয়া জরুরি। নিচে এমন কিছু পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা আপনার দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক হতে পারে:

১. রঙিন ফল ও সবজি
ফল ও সবজি ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অন্যতম সেরা উৎস।

সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, কেল, ব্রোকলি, সয়াবিন পাতা, লাউ শাক, পুই শাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও ক্যালসিয়াম থাকে।

রঙিন ফল: আপেল, কলা, পেয়ারা, কমলা, আম, জাম, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ফল ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের চাহিদা পূরণ করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ ধরনের ফল ও সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

২. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
শরীরের বৃদ্ধি, টিস্যু মেরামত এবং পেশী গঠনে প্রোটিনের ভূমিকা অপরিহার্য।

ডিম: ডিমকে প্রায়শই "সম্পূর্ণ প্রোটিন" বলা হয় কারণ এতে শরীরের প্রয়োজনীয় সমস্ত অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। এটি ভিটামিন ডি, বি১২, সেলেনিয়াম এবং কোলিনেরও ভালো উৎস।

মাছ: স্যামন, সার্ডিন, টুনা এবং দেশীয় ছোট মাছ যেমন মলা, ঢেলা ইত্যাদিতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং উচ্চ মানের প্রোটিন থাকে, যা হার্টের স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য উপকারী।

মাংস: মুরগির মাংস (চর্বিহীন), গরুর মাংস (চর্বিহীন অংশ) এবং খাসির মাংসে উচ্চ মানের প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে। তবে, অতিরিক্ত লাল মাংস পরিহার করা উচিত।

ডাল ও শস্য: মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা, শিম ও মটরশুঁটিতে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে।

৩. শস্য ও জটিল কার্বোহাইড্রেট
এগুলো শরীরের প্রধান শক্তির উৎস এবং হজম প্রক্রিয়াকেও সাহায্য করে।

বাদামী চাল (Brown Rice): সাদা চালের চেয়ে এতে ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে।

আস্ত শস্যের রুটি বা আটা: সাদা আটার বদলে গমের আটা বা মাল্টিগ্রেন রুটি বেছে নিন, যা ফাইবার এবং বি ভিটামিন সরবরাহ করে।

ওটস ও কুইনোয়া: ওটস ফাইবার এবং কুইনোয়া একটি সম্পূর্ণ প্রোটিন উৎস হিসেবে পরিচিত, যা সকালের নাস্তা বা অন্যান্য খাবারে যোগ করা যেতে পারে।

৪. স্বাস্থ্যকর চর্বি
শরীরকে সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর চর্বি অপরিহার্য।

বাদাম ও বীজ: কাঠবাদাম, আখরোট, চিয়া বীজ, তিল, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদিতে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার, প্রোটিন এবং ভিটামিন ই ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে।

অ্যাভোকাডো: এটি মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ফাইবার, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন কে ও ই সমৃদ্ধ। (যদিও বাংলাদেশে সহজলভ্য নয়, এটি একটি পুষ্টিকর ফল।)

জলপাই তেল (Olive Oil): রান্নার জন্য এটি একটি স্বাস্থ্যকর তেল, যা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

৫. দুগ্ধজাত পণ্য ও বিকল্প
হাড় ও দাঁতের সুস্থতার জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি প্রয়োজন।

দুধ, দই ও পনির: এগুলোতে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি থাকে।

দুগ্ধবিহীন বিকল্প: যারা দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ করেন না, তারা ফোর্টিফাইড সয়া দুধ, বাদামের দুধ বা তিলের দুধ গ্রহণ করতে পারেন।

সুষম খাদ্যের মূলমন্ত্র: বৈচিত্র্য ও পরিমিতিবোধ
সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য কোনো একটি নির্দিষ্ট খাবারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে, উপরোক্ত বিভিন্ন খাদ্য গোষ্ঠী থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা জরুরি। আপনার প্রতিদিনের খাবারে শস্য, প্রোটিন, ফল, সবজি এবং স্বাস্থ্যকর চর্বির সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখুন। এর পাশাপাশি, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

সাব্বির

×