
ছবি: প্রতীকী
বর্তমানে অনেক মানুষ গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি কিংবা বদহজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এসব সমস্যা থেকে সাময়িক স্বস্তি পেতে অনেকেই গ্যাসের ওষুধ খেয়ে থাকেন। দোকান থেকে সহজেই পাওয়া যায় এমন নানা রকম অ্যান্টাসিড, প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর বা হজমের ট্যাবলেট। তবে বারবার বা নিয়মিত এসব ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেকেই জানেন না, গ্যাসের ওষুধ বেশি খেলে তা পেটের স্থায়ী সমস্যায় রূপ নিতে পারে।
গ্যাসের ওষুধ মূলত পেটে থাকা অতিরিক্ত অ্যাসিড বা অম্লতার মাত্রা কমিয়ে দেয়। এই ওষুধ খেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আরাম পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হলো, শরীরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া অ্যাসিডও হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই অ্যাসিডই খাবার ভাঙতে সাহায্য করে এবং পেটে থাকা ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার ফলে অ্যাসিডের মাত্রা অনেক কমে যায়। তখন হজমপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং নানা ধরনের পেটের জটিলতা দেখা দেয়।
প্রথম দিকে হয়তো তেমন কিছু বোঝা যায় না। মানুষ ভাবে, ওষুধ খাচ্ছে বলেই ঠিকমতো আরাম পাচ্ছে। কিন্তু ধীরে ধীরে ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। শরীর স্বাভাবিকভাবে কাজ করা ভুলে যায়। ফলে ছোটখাটো খাবার খেলেও হজমে সমস্যা হয়। পেটে গ্যাস জমে, ফাঁপা লাগে, ঢেঁকুর ওঠে, অস্বস্তি হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বুক জ্বালাপোড়া, বমি ভাব, কিংবা খাবারে অরুচিও দেখা দিতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ খান, তাদের অনেকের পাকস্থলীর প্রাচীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে আলসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। আবার দীর্ঘমেয়াদে এসব ওষুধ কিডনি সমস্যা, হাড় ক্ষয় এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। যেহেতু অ্যাসিড খাবারের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, তাই অ্যাসিড কমে গেলে সংক্রমণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
এছাড়া নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খেলে ভিটামিন বি১২-এর অভাব দেখা দিতে পারে। ভিটামিন বি১২ হজম ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে ক্লান্তি, স্মৃতিভ্রষ্টতা এমনকি অবসাদও দেখা দিতে পারে। অনেক সময় গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার ফলে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের শোষণ কমে যায়। এতে হাড় দুর্বল হয় ও ভাঙার ঝুঁকি বাড়ে।
গ্যাসের সমস্যা মূলত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে জড়িত। অনিয়মিত খাওয়া, ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত চা-কফি পান, ধূমপান, দেরি করে ঘুমানো কিংবা মানসিক চাপের কারণে গ্যাস্ট্রিক বাড়ে। এসব কারণ দূর না করে শুধু ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয় না। বরং সমস্যা আরও বাড়ে।
তাই যদি মাঝে মাঝে গ্যাস বা হজমের সমস্যা হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। প্রয়োজন হলে পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান, সময়মতো খাবার খাওয়া এবং শরীরচর্চা করার অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো। মানসিক চাপ কমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শরীরের যেকোনো সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে সেটি সমাধানের চেষ্টা করা। ওষুধে সাময়িক আরাম মিললেও দীর্ঘদিন তা খেলে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে যারা গ্যাসের সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ভুগছেন, তাদের উচিত একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা।
অতএব, গ্যাসের ওষুধকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এটি শুধু সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু বেশি খেলে পেটের স্থায়ী সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই গ্যাসের সমস্যায় বারবার ওষুধ না খেয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সচেতন থাকলে অনেক বড় বিপদ থেকেও বাঁচা সম্ভব।
এম.কে.