ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

সৈয়দপুরে ‘রেল বিপ্লব’! পরিত্যক্ত লোহায় তৈরি হচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রাংশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, সৈয়দপুর

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ২৬ জুলাই ২০২৫

সৈয়দপুরে ‘রেল বিপ্লব’! পরিত্যক্ত লোহায় তৈরি হচ্ছে কোটি টাকার যন্ত্রাংশ

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।

নানা প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে সৈয়দপুর রেলকারখানায় তৈরি হচ্ছে নতুন তিন যন্ত্রাংশ। এতে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বছরে সরকারের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ কে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, এ কারখানা গড়ার কাল থেকে দেড় শতাব্দীরও অধিক সময়ে কোন নতুন যন্ত্রাংশ তৈরি হয়নি। এখানে শুধু সংস্কার বা মেরামত হত। তবে আমাদের দক্ষ প্রকৌশল,কারিগর ও জনবল থাকায় এখানে রেলের আমদানীকৃত সকল মালামাল তৈরি করা সম্ভব। এরই ধারাবাহিকতায় দুই কোচের সংযোগে ব্যবহৃত বাফা হুক, সিবিসি ক্যাপলার বা নাকল ক্যাপলার হল ও সেন্ট্রারিং রিং তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরিত্যক্ত মালামাল দিয়ে এই তিন যন্ত্রাংশ ১০ টি সেট কারখানার কামারশালা ও মেশিন সোপে সফল ভাবে তৈরি করে মিটার গেজ বিভিন্ন ট্রেনের কোচে সংযোগ দেন। গত দুই মাস আগে এ কারখানার তৈরীকৃত যন্ত্রাংশ রেলকোচে লাগানো হয়। নির্বিঘ্নে চলাচল করছে বিভিন্ন লোকোমোটিভের কোচে। কোনো অভিযোগ নেই। আমদানি না করে এখানে তৈরির মাধ্যমে এসব যন্ত্রাংশেই রেলের কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

জানা যায়, রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীবাহী ২৮ টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন চলাচল করছে। এসকল ট্রেনে গড়ে ২০ থেকে ২৪ টি কোচ রয়েছে। প্রায় ৭ শত কোচ রিরতিহীন ভাবে হাজার হাজার যাত্রী পরিবহন করায় কোচের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষয়ে কিংবা নষ্ট হয়।  যন্ত্রাংশগুলো স্থাপন বা মেরামতে নেয়া সৈয়দপুর রেলকারখানায়। নষ্ট যন্ত্রাংশ বরাবরই স্ক্রাপ বা পরিত্যক্ত লোহা হিসেবে বিক্রি করা হয়। পরিবর্তে প্রতিবছর শত কোটি টাকার অধিক মূল্যে যন্ত্রাংশ এনে সৈয়দপুর রেলকারখানায় লাগানো হত। এ কারখানায় সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শুধু পকেট ভারীর লালসায় রেলের উন্নয়নে মাস্টার মাইন্ডরা আমদানি খাতের মধুর স্বাদে উন্মাদ থাকত। ব্রিটিশদের হাতে গড়া এ কারখানার ২৪ টি সোপে তৎকালীন সময়ে প্রায় ১০ হাজার জনবল ছিল। এখন ২৯ টি সোপে মাত্র ২৮৫৯ জন মঞ্জুরি রয়েছে। সেখানে কর্মরত কেবল ৭২৮ জন। যার সোপ প্রতি মঞ্জুরির ২০ থেকে ২৫ ভাগ শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে প্রায় দেড়শত কোটি টাকার মূল্যে সাড়ে শত মেশিন নষ্ট হতে চলেছে।

শ্রমিকরা জানায়, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক ও নিয়মিত অবসরের পর পর্যাপ্ত নিয়োগ না হওয়ায় এমন সংকট বিরাজ করছে। ফলে ক্যারেজ ও ওয়াগনের নিয়মিত ব্যবস্থাপনায় শিডিউল বিপর্যয়সহ বিশেষ ট্রেন রেক মেরামত ও বিদেশ থেকে আনা নতুন ট্রেনের এসেম্বলিং বন্ধ হয়ে যায়। জনবল সংকট পূরণ না করে ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার এই সংকট জনবল দিয়ে সংস্কার কাজ চালিয়েছে। এতে পরিস্থিতি বাধ্য করে রেল যন্ত্রাংশ আমদানি করতে। এভাবে রেলখাতকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। হামিদুর রহমান নামের কামারশালা সোপের কারিগর জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, নির্দেশনা উপসহকারী প্রকৌশলী বা ইনচার্জ ও সকলের নিবিড় প্রচেষ্ঠায় এই তিনটি যন্ত্রাংশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।

কামারশালা সোপের ইনচার্জ উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটা মূলত স্যারের প্রচেষ্টা। পর্যাপ্ত কাঁচামাল সরবরাহ ও দিক নির্দেশনা দিলে যে কোনো যন্ত্রাংশ তৈরি সম্ভব।

একই মতামত প্রকাশ করেন লোক মেশিন সোপের ইনচার্জ উপসহকারী প্রকৌশলী মো: মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা কাজের জন্য সর্বদা প্রস্তত। আর নতুন উদ্ভাবনী বিষয়টি ভালো লাগে। এতে কারিগররাও শিহরিতো থাকেন সৃষ্টিশীল কাজে।

দুটি কোচের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় ও সংঘর্ষের সময় শক শোষণ করতে সাহায্যকারী যন্ত্রাংশের অংশ হচ্ছে ‘বাফা হুক’, ‘সিবিসি ক্যাপলার’ বা নাকল ক্যাপলার হল ও সেন্ট্রারিং রিং শুধু নয়, আমরা রেলওয়ের যন্ত্রাংশ আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাই। এমন লক্ষ্য নিয়ে ২০২৪ এরপর নবচেতনার উজ্জীবনী শক্তি নিয়ে কাজ করছি। ইনশাল্লাহ এ কারখানার নতুন যন্ত্রাংশ তৈরির মাধ্যমে রেলখাতকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়া যাবে বলে মনে করেন সৈয়দপুর রেল কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ। এর জন্য সংশ্লিষ্টউর্ধ্বতনদের কাছে সার্বিক সহায়তা কামনা করেন সৈয়দপুর রেলওয়ের এ জ্যেষ্ঠ অভিভাবক।

মিরাজ খান

×