ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

২০ বছর পর ফের খুঁজে পাওয়া গেলো বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সাপটি

প্রকাশিত: ০১:৫৬, ২৭ জুলাই ২০২৫

২০ বছর পর ফের খুঁজে পাওয়া গেলো বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সাপটি

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সাপ‘বার্বাডোস থ্রেডস্নেক’দীর্ঘ প্রায় দুই দশক নিখোঁজ থাকার পর ফের দেখা মিলেছে এই ক্ষুদ্র সরীসৃপটির। বার্বাডোসের একটি ছোট বনাঞ্চলে শত শত পাথর উল্টে এক গবেষক যখন হাল ছেড়ে দিতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই খুঁজে পেলেন এই বিরল প্রাণীকে।

বার্বাডোসের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প কর্মকর্তা কনর ব্লেডস জানান, ‘এক বছর ধরে খোঁজার পর হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। কিন্তু এক সকালে পাথর উল্টিয়ে হঠাৎই দেখে ফেলি এক অতি ক্ষুদ্র সাপ।’

এই সাপ এতটাই ছোট যে এটি অনায়াসেই একটি কয়েনের উপর বসানো যায়। খালি চোখে সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। ব্লেডস প্রথমে সাপটিকে একটি কাচের জারে মাটি, শুকনো পাতা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানসহ রেখে দেন। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা চালান।

তিনি বলেন, ‘সাপটি পেট্রি ডিশে নড়াচড়া করছিল, তাই সঠিকভাবে শনাক্ত করতে কষ্ট হচ্ছিল। তবে একটি স্থির ছবি থেকে নিশ্চিত হই যে এটাই সেই বারবাডোস থ্রেডস্নেক।’

ফের ফিরে এলো হারিয়ে যাওয়া প্রজাতি

বুধবার ‘Re:wild’ নামের একটি সংরক্ষণ সংস্থা বার্বাডোসের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে এই ‘পুনরাবিষ্কারের’ ঘোষণা দেয়। সংস্থার ক্যারিবীয়ান প্রোগ্রাম অফিসার জাস্টিন স্প্রিংগার বলেন, ‘এটি শুধু একটি প্রজাতির ফিরে আসা নয়, বরং আমাদের পরিবেশে তার গুরুত্বের কথাও মনে করিয়ে দেয়।’

সাপটি শেষবার দেখা গিয়েছিল ১৮৮৯ সালে। এরপর থেকে এটিকে ‘বিশ্ব থেকে হারিয়ে যাওয়া’ ৪,৮০০টি উদ্ভিদ, প্রাণী ও ছত্রাকের তালিকায় যুক্ত করা হয়।

অন্ধ, ক্ষুদ্র, মাটির নিচে বসবাসকারী

বার্বাডোস থ্রেডস্নেক দেখতে সরু সুতোর মতো, এটি সম্পূর্ণ অন্ধ। মাটির নিচে বাস করে এবং প্রধানত পিঁপড়া ও টার্মাইট খেয়ে বেঁচে থাকে। একটি মাত্র ডিম পাড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক সাপটির দৈর্ঘ্য মাত্র ৪ ইঞ্চি (প্রায় ১০ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত হয়।

ব্লেডস বলেন, ‘তারা লুকিয়ে থাকাতে পছন্দ করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুসন্ধান করলেও দেখা না পাওয়াই স্বাভাবিক।’

চলতি বছরের ২০ মার্চ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ব্লেডস ও স্প্রিংগার বারবাডোসের মাঝামাঝি একটি বিরল গাছের (জ্যাক-ইন-দ্য-বক্স ট্রি) চারপাশে খোঁজ করছিলেন। ঠিক তখনই তারা সাপটি দেখতে পান। স্প্রিংগার বলেন, ‘ঘটনাটা আরও দারুণ, কারণ সাপ খোঁজার মুহূর্তেই আমরা গাছটির জরিপও করছিলাম।’

এক যুগ আগের গবেষণায় প্রথম প্রমাণ

২০০৮ সালে টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস. ব্লেয়ার হেজেস প্রথমবারের মতো এই সাপের জিন বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারেন, এটি একটি নতুন প্রজাতি। তিনি সাপটির নাম দেন Tetracheilostoma carlae, তার স্ত্রীর নামে। তিনি জানান, ‘আমি তখন শত শত পাথর উল্টিয়েও খুঁজে পাইনি। তাই আমার ধারণা, এটি সত্যিই একটি বিরল প্রজাতি।’

তিনি আরও বলেন, সেই সময় পর্যন্ত মাত্র তিনটি নমুনা পাওয়া গিয়েছিলদুটি লন্ডনের একটি জাদুঘরে, এবং একটি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি সংগ্রহশালায়।

সংরক্ষণের আহ্বান

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই পুনরাবিষ্কারের মাধ্যমে বার্বাডোস থ্রেডস্নেক পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতীক হয়ে উঠবে। কারণ এই ছোট দ্বীপে অনেক স্থানীয় প্রজাতি ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যেমন বার্বাডোস রেসার সাপ, বার্বাডোস স্কিংক এবং একটি গুহার চিংড়ি প্রজাতি।

অধ্যাপক হেজেস বলেন, ‘আমি আশা করি এখন অন্তত এটির সংরক্ষণে মনোযোগ আসবে। বার্বাডোসের অবস্থা করুণহাইতির পর এটি ক্যারিবীয় অঞ্চলে সবচেয়ে কম মূল বনভূমি ধরে রাখতে পেরেছে।’

 

সূত্র: এপি।

রাকিব

×