
ছবিঃ সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির নতুন প্রস্তাব নিয়ে হামাস ‘আসলে চুক্তি করতে চায়নি’, যার পরপরই কাতার থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তাদের আলোচক দল প্রত্যাহার করে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সর্বশেষ প্রস্তাবের জবাবে দেখা গেছে “চুক্তির প্রতি আগ্রহের অভাব”।
তিনি জানান, এখন বিকল্প উপায়ে জিম্মিদের মুক্ত করার পথ খোঁজা হবে, একই মত প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও।
হামাস এখনও ট্রাম্পের মন্তব্যের কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এর আগেই তারা উইটকফের মন্তব্যকে “নেতিবাচক” বলে আখ্যা দিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিল। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ইসরায়েলি দল আগামী সপ্তাহে আবার দোহায় ফিরবে—এমন বার্তা তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে পেয়েছে।
মূল বিরোধ: সেনা প্রত্যাহার, ত্রাণ বিতরণ ও যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব
মার্কিন, কাতারি ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীরা স্বীকার করেছেন যে এখনও বেশ কয়েকটি মূল ইস্যুতে মতানৈক্য রয়েছে, যেমন:
ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা বিতরণের পদ্ধতি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা। হামাসের সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া ছিল মূলত এই তিন বিষয়ে কেন্দ্রিক।
এক সিনিয়র ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, এই তিন বিষয় নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।
উইটকফ: “চুক্তির পথে হামাস নেই”
উইটকফ বলেন: “মধ্যস্থতাকারীরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলেও, হামাস ঐক্যবদ্ধ নয় এবং সদিচ্ছাও দেখাচ্ছে না। এখন আমরা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার এবং গাজার জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির বিকল্প উপায় ভাবছি।”
তিনি আরও বলেন, “হামাসের এ রকম আত্মকেন্দ্রিক আচরণ দুঃখজনক। আমরা যুদ্ধের অবসান ও গাজায় স্থায়ী শান্তির জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।”
নেতানিয়াহুর অফিস জানায়, হামাসের প্রতিক্রিয়ার আলোকে আলোচক দল কাতার ছাড়বে, যদিও বিস্তারিত জানায়নি। তবে দোহায় অবস্থানরত এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, “আলোচনা ভেঙে পড়েনি বা বিস্ফোরণ হয়নি, তবে হামাসের মনোভাব আলোচনার পথে বাধা তৈরি করছে।”
নেতানিয়াহু এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন: “হামাসই জিম্মি মুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা।”
ট্রাম্প: “তারা মরতে চায়”
হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন: “হামাস চুক্তি করতে চায়নি। আমি মনে করি তারা মরতে চায়। এখন শুধু কয়েকজন জিম্মি বাকি। তারা জানে এরপর কী হবে। তাই তারা পিছিয়ে গেছে।”
হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা এখনো আলোচনায় আগ্রহী এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাজ করতে চায়।
৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবেও অগ্রগতি নেই
যুক্তরাষ্ট্র একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়, যেখানে:
হামাস ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি এবং
১৮ জন মৃতদেহ ফিরিয়ে দেবে, এর বিনিময়ে
ইসরায়েল বহু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
কিন্তু এখনও চুক্তি হয়নি।
গাজায় এখনও ৫০ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জনের জীবিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসরায়েলে চাপ বাড়ছে—বিক্ষোভ ও পরিবারগুলোর ক্ষোভ
ইসরায়েলের তেলআবিবে বৃহস্পতিবার রাতে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করে জিম্মিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়।
জিম্মি নিমরোদ কোহেনের মা, ভিকি কোহেন বলেন: “নেতারা বারবার আংশিক চুক্তির কথা বলছেন, যাতে নিমরোদের মতোদের ফেলে রাখা হয়।”
তিনি বলেন, “কেউ কেউ তো নিমরোদের মতো সৈন্যদের ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলছে! যুদ্ধের অবসানই আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে আনতে পারে।”
ইসরায়েলি মন্ত্রীর উসকানিমূলক মন্তব্যে নেতানিয়াহুর বিরোধিতা
চরমপন্থী ইসরায়েলি ঐতিহ্য মন্ত্রী আমিখাই এলিয়াহু বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন: “আমরা গাজাকে নিশ্চিহ্ন করছি এবং এই জনসংখ্যাকেই মুছে দিচ্ছি, যাদের হিটলারের মাইন ক্যাম্পফে বইয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “গাজার সব অঞ্চল একদিন ইহুদি হয়ে যাবে।”
নেতানিয়াহু তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, “এ ধরনের মন্তব্যের সঙ্গে আমার সরকার একমত নয়, এলিয়াহু যুদ্ধ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্তের সদস্যও নন।”
মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হচ্ছে
জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলো ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ নিয়ে বারবার সতর্ক করছে। হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টিতে ৯ জন মারা গেছেন—এ মাসে এমন মৃত্যু দাঁড়াল ৫৭ জনে।
মেডসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে (MSF) জানিয়েছে, তাদের ক্লিনিকে অপুষ্ট শিশু ও নারীর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। গত সপ্তাহে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের শিশু এবং গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের স্ক্রিনিংয়ে ২৫% অপুষ্ট পাওয়া গেছে। ইসরায়েল বলছে, তারা খাদ্য সংকটের জন্য দায়ী নয় এবং দায়ী হামাস।
তবে বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল মার্চ মাসে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয় এবং এরপর আবার হামলা শুরু করে—দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়।
বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে অবরোধ কিছুটা শিথিল হলেও খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট আরও বেড়েছে।
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা