
ছবি: সংগৃহীত
পিত্তথলির ক্যানসার একটি বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী রোগ, যা পিত্ত সংরক্ষণকারী ছোট্ট অঙ্গটিতে গঠিত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এর কোনো লক্ষণ না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেরিতে রোগ শনাক্ত হয়, তখন ক্যানসার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণহীন হওয়ায় দেরিতে ধরা পড়ে
পিত্তথলি যকৃতের নিচে অবস্থিত একটি ছোট অঙ্গ, যা হজমে সহায়ক পিত্তরস জমা রাখে। ক্যানসার আক্রান্ত হলে এর কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেয় না। পরবর্তী পর্যায়ে দেখা দিলে তা অন্যান্য রোগের সঙ্গে মিলে যায়, ফলে নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হলে সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ রোগী দেরিতে চিকিৎসা নেন, যখন ক্যানসার পিত্তথলি ছাড়িয়ে লিভার কিংবা আশপাশের অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
পিত্তথলির ক্যানসার কোথায় কোথায় ছড়ায়?
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, এই ক্যানসার সাধারণত নিচের ধাপে ধাপে ছড়ায়—
-
পিত্তথলির অভ্যন্তরীণ স্তর থেকে বাইরের স্তর পর্যন্ত
-
কাছাকাছি লসিকাগ্রন্থিতে
-
যকৃত ও পিত্তনালির মতো আশপাশের অঙ্গে
-
রক্তপ্রবাহ বা লসিকা প্রবাহের মাধ্যমে শরীরের অন্য অংশে (মেটাস্ট্যাটিক ক্যানসার)
কতটা সাধারণ এই ক্যানসার?
এই ক্যানসার যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি এক লাখে মাত্র দুই জনের মধ্যে দেখা যায়। তবে ভারতে, জাপানে, কোরিয়া, পোল্যান্ড ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশে এর হার তুলনামূলকভাবে বেশি, যেখানে গলস্টোন বা পিত্তপাথরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কারণ বেশি দেখা যায়।
ক্যানসারের কারণ কী?
মায়োক্লিনিক অনুসারে, পিত্তথলির কোষের ডিএনএ পরিবর্তনের মাধ্যমে এই ক্যানসারের শুরু হয়। সাধারণত কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট নিয়মে জন্মায় ও মরে যায়, কিন্তু ক্যানসার কোষে এই নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তারা দ্রুত গজায় ও মরে না, ফলে অস্বাভাবিক কোষের ঘনত্ব বাড়ে। এই কোষগুলো টিউমারে পরিণত হয়, আশপাশের টিস্যু দখল করে এবং শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ক্যানসার অ্যাডিনোকারসিনোমা ধরনের হয়।
লক্ষণগুলো কী?
মায়োক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, পিত্তথলির ক্যানসারের উপসর্গগুলো হলো—
-
পেটের ডানদিকে উপরের অংশে ব্যথা
-
পেটে ফোলা ভাব
-
পেটে গাঁট বা চাকা অনুভব
-
ওজন হ্রাস
-
জন্ডিস (চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া), যা সাধারণত অগ্রসর পর্যায়ে দেখা দেয়
প্রথমদিকে এসব লক্ষণ অনুপস্থিতও থাকতে পারে।
রোগের পর্যায়
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, রোগের বিস্তারের ওপর নির্ভর করে এটি বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা হয়—
পর্যায় ০: অস্বাভাবিক কোষ কেবল ভেতরের স্তরে সীমাবদ্ধ
পর্যায় ১: কোষ মিউকোসাল স্তরে এবং মাংসপেশির স্তর পর্যন্ত পৌঁছায়
পর্যায় ২: টিস্যুর আরও গভীরে ছড়িয়ে পড়ে
পর্যায় ৩: যকৃত বা আশপাশের অঙ্গে ছড়ায়, নিকটবর্তী লসিকাগ্রন্থিতে পৌঁছাতে পারে
পর্যায় ৪: একাধিক লসিকাগ্রন্থি, রক্তনালী বা শরীরের দূরবর্তী অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে
ঝুঁকি কী কী?
পিত্তথলির ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ায় যেসব বিষয়—
-
নারী: উচ্চমাত্রার ইস্ট্রোজেন হতে পারে কারণ
-
বয়স: সাধারণত ৬৫ বছরের পর ঝুঁকি বাড়ে
-
পিত্তপাথর: বড় আকারের গলস্টোন থাকলে ঝুঁকি বেশি
-
অন্যান্য সমস্যা: পলিপ, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, পিত্তনালির প্রদাহ (যেমন প্রাইমারি স্ক্লেরোসিং কোলেঞ্জাইটিস)
প্রতিরোধ সম্ভব কি?
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক বলছে, শতভাগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তবে ঝুঁকির উপাদান কমিয়ে আনা যেতে পারে। যেমন—ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। তবুও নিশ্চিতভাবে প্রতিরোধের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সতর্কতা ও সচেতনতাই হতে পারে রক্ষা পাওয়ার প্রথম ধাপ। যেকোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব