
ছবি: সংগৃহীত
হার্ট অ্যাটাক একটি নীরব ঘাতক, যা প্রায়শই আকস্মিকভাবে আসে বলে মনে হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে, এমনকি ৫ দিন পূর্বেই শরীর কিছু সতর্ক সংকেত দিতে শুরু করে। দুর্ভাগ্যবশত, এই লক্ষণগুলো এতটাই সাধারণ যে বেশিরভাগ মানুষই সেগুলোকে ক্লান্তি, স্ট্রেস বা অন্য কোনো ছোটখাটো সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করেন। সময়মতো এই সতর্কতাগুলো চিনতে পারলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব।
এখানে হার্ট অ্যাটাকের ৫ দিন আগে শরীর যে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ জানান দিতে পারে, সেগুলো তুলে ধরা হলো:
১. অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা:
যদি আপনি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া সত্ত্বেও হঠাৎ করে চরম ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করেন, যা আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, তবে তা হার্ট অ্যাটাকের একটি পূর্বলক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি বেশি দেখা যায়। হৃদপিণ্ড যখন পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেনের অভাব হয়, যার ফলে এই ক্লান্তি অনুভূত হয়।
২. শ্বাসকষ্ট:
শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই যদি আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অথবা সামান্য হাঁটাচলা বা সিঁড়ি ভাঙার পরেই দম ফুরিয়ে যায়, তবে এটি হৃদপিণ্ডের সমস্যার একটি বড় ইঙ্গিত। ফুসফুসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে না পারলে বা হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে গেলে এই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়াও একটি গুরুতর লক্ষণ।
৩. বুকে অস্বস্তি বা হালকা ব্যথা:
হার্ট অ্যাটাকের সময় তীব্র ব্যথা হওয়ার আগে অনেকে বুকে এক ধরনের অস্বস্তি, চাপ, আঁটসাঁট ভাব বা হালকা ব্যথা অনুভব করেন। এই ব্যথা বুকের মাঝখানে শুরু হয়ে হাত (বিশেষ করে বাম হাত), ঘাড়, চোয়াল, পিঠ বা পেটেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি সর্দি বা গ্যাসের ব্যথা ভেবে অনেকে উপেক্ষা করেন, কিন্তু এই অনুভূতি যদি বারবার আসে বা বিশ্রামের পরও না কমে, তবে তা বিপজ্জনক।
৪. হজমের সমস্যা, বমি বমি ভাব বা পেটে ব্যথা:
যদিও এটি হজমের সমস্যা বলে মনে হতে পারে, তবে বমি বমি ভাব, বমি, বদহজম বা পেটে ব্যথাও হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই ধরনের লক্ষণ বেশি দেখা যায়। হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে এবং এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।
৫. অতিরিক্ত ঘাম:
হঠাৎ করে, কোনো কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বিশেষ করে রাতের বেলা বা ঠান্ডা আবহাওয়ায়, হার্ট অ্যাটাকের একটি গোপন লক্ষণ হতে পারে। হৃদপিণ্ড যখন পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে সংগ্রাম করে, তখন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘাম গ্রন্থিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা অতিরিক্ত ঘামের কারণ হয়। এটি প্রায়শই ফ্লু বা মানসিক চাপের লক্ষণ ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
এই লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক যদি আপনি হঠাৎ অনুভব করেন এবং তা অস্বাভাবিক মনে হয়, বিশেষ করে যদি আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি (যেমন – উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, ধূমপানের অভ্যাস বা পারিবারিক ইতিহাস) থাকে, তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো সচেতনতা এবং জরুরি চিকিৎসা হার্ট অ্যাটাকের মারাত্মক পরিণতি থেকে রক্ষা করতে পারে। আপনার শরীর যে সংকেত দিচ্ছে, তা উপেক্ষা করবেন না।
ফারুক