
ছবি: সংগৃহীত
কিডনি সমস্যায় ভোগা রোগীদের জন্য প্রতিদিনের খাবারের তালিকা তৈরির সময় পুষ্টি মানের পাশাপাশি পটাশিয়ামের পরিমাণেও নজর রাখা জরুরি। তবে অনেকেই জানেন না দেখতে নিরীহ মনে হলেও কলা ও নারকেল একসঙ্গে খাওয়া কিডনি রোগীদের জন্য ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এই দুই ফলেই রয়েছে বিপুল পরিমাণ পটাশিয়াম, যা দুর্বল বা বিকল কিডনির ক্ষেত্রে শরীর থেকে বের হতে না পেরে রক্তে জমে হাইপারক্যালেমিয়ার মতো মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইপারক্যালেমিয়া হলে দেখা দিতে পারে পেশি দুর্বলতা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, অবসাদ এমনকি হার্ট অ্যাটাকও। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (AIIMS)-এর ডাঃ পারভেজ জানান, “কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে পটাশিয়াম শরীর থেকে বের হয় না। তখন কলা বা নারকেলের মতো ফল খাওয়া রক্তে পটাশিয়াম বাড়িয়ে জীবননাশের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”
একটি মাঝারি কলায় থাকে প্রায় ৩৭৫–৪৮৭ মি.গ্রা. পটাশিয়াম, যা একে কিডনি রোগীদের জন্য ‘সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণযোগ্য’ তালিকায় নিয়ে এসেছে। অপরদিকে, নারকেল বিশেষ করে নারকেল পানি ও শাঁস উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হলেও অনেক সময় তা অজানা রয়ে যায়। ফলে আলাদা আলাদা খাওয়াই যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে একসাথে খেলে তা রীতিমতো ‘পটাশিয়াম বোমা’।
ডায়েটিশিয়ানদের মতে, এসব ফল “সামান্য” খেলেও ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, কোনো ফলের আসলে কতটুকু পটাশিয়াম রয়েছে, তা নির্ভরযোগ্যভাবে বলা কঠিন। আর কিডনি যখন দুর্বল, তখন একবার পটাশিয়াম বেড়ে গেলে তা কমানোর জন্য শরীরের নিজস্ব কোনো উপায় কার্যকর থাকে না।
আরও বিপদের বিষয় হলো, উপসর্গ অনেক সময় ধীরে ধীরে আসে। তখন চিকিৎসা নেওয়ার আগেই শরীরে ক্ষতি হতে শুরু করে। তাই কিডনি রোগীদের উচিত এই ফলদ্বয় একসাথে তো নয়ই, আলাদাভাবেও যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা।
বিকল্প কী?
পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন কম পটাশিয়ামযুক্ত ফলের দিকে ঝুঁকতে। যেমন:
- আপেল
- আঙুর
- নাশপাতি
- স্ট্রবেরি
- ব্লুবেরি
- আনারস
এই ফলগুলো খেতে সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর এবং কিডনির জন্য তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
সুতরাং, পরবর্তীবার কেউ যদি আপনাকে কলা-নারকেলের স্মুদি খেতে বলেন, ভেবেচিন্তে না বলুন। কিডনি ভালো রাখতে হলে খাদ্য তালিকায় সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। পরামর্শ নিন পুষ্টিবিদের, নির্ধারণ করুন আপনার জন্য নিরাপদ খাবার তবেই সুস্থ থাকা সম্ভব।
মুমু ২