
প্রচণ্ড গরমে কিংবা ব্যায়ামের পর শরীরে পানির ঘাটতি হলে প্রথমেই যেটা মনে আসে, তা হলো এক গ্লাস ঠান্ডা পানি। তবে কিছু গবেষণা বলছে, দুধ হতে পারে পানি থেকেও বেশি কার্যকর হাইড্রেশনের উৎস। যদিও এই দাবির পেছনে এখনো পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তবু দুধের পুষ্টিগুণ ও ইলেকট্রোলাইট উপাদান এ ধারণাকে কিছুটা জোর দিচ্ছে।
পানি বনাম দুধ: কে বেশি কার্যকর?
পুষ্টি বিজ্ঞাপনে অনেক সময় দেখা যায় “দুধ পানি থেকেও বেশি হাইড্রেট করে” এই ধরনের দাবি। এই দাবির পেছনে কিছু ছোট পরিসরের গবেষণার ভিত্তি আছে। ২০১৬ সালে The American Journal of Clinical Nutrition এ প্রকাশিত এক গবেষণায় একে “বেভারেজ হাইড্রেশন ইনডেক্স (BHI)” নাম দিয়ে পরিমাপের চেষ্টা করা হয়।
এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নানা ধরনের পানীয় পান করেন: যেমন সাধারণ পানি, স্পার্কলিং ওয়াটার, পূর্ণচর্বিযুক্ত দুধ, স্কিম মিল্ক, কোলা, স্পোর্টস ড্রিংক, কফি, বিয়ার, কমলার রস, ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন এবং চা। দেখা যায়, দুধ শরীরকে পানি থেকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে বেশি হাইড্রেট রাখে। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা দুধে থাকা ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট ও ইলেকট্রোলাইটকে চিহ্নিত করেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুধ যতই পুষ্টিকর হোক না কেন, দৈনন্দিন হাইড্রেশনের ক্ষেত্রে এখনও নিরাপদ ও সহজলভ্য সমাধান হলো পানি।
“আমি হাইড্রেশনের জন্য দুধ ব্যবহার করি, তবে পানি থেকে দুধ ভালো এই কথা বলার মতো যথেষ্ট প্রমাণ এখনো নেই,” বলেন রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের পুষ্টিবিদ ক্রিস্টিন গুসটাশ।
পেশি পুনর্গঠনে দুধের ভূমিকা
অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে ব্যায়ামের পর শরীরে শুধু পানি নয়, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতিও পূরণ করতে হয়। ২০১৬ সালে আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল ডেইরি কাউন্সিল এর অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ব্যায়ামের পর কম চর্বিযুক্ত দুধ পানি বা স্পোর্টস ড্রিংকের তুলনায় শরীরকে বেশি কার্যকরভাবে রিহাইড্রেট করে।
পুষ্টিবিদ অ্যামি রিড বলেন, “ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইট এবং গ্লাইকোজেন নষ্ট হয়। এগুলো পুনরায় পূরণ করতে আদর্শ অনুপাতের কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন দরকার, যা দুধে স্বাভাবিকভাবেই আছে।”
এই কারণে অনেক দৌড়বিদ বা ক্রীড়াবিদ ব্যায়ামের পর চকলেট দুধ পান করেন, কারণ এটি শুধু হাইড্রেট করে না, পেশির পুনর্গঠনেও সহায়তা করে।
কখন দুধকে পানির বিকল্প ভাবা যায়?
অনেকে শুনে থাকবেন যে প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে শরীরের প্রকৃত চাহিদা নির্ভর করে বয়স, দৈহিক কার্যকলাপ, গর্ভাবস্থা এবং আবহাওয়ার ওপর।
গড়ে একজন প্রাপ্তবয়স্কের প্রতিদিন ছয় থেকে বারো গ্লাস তরল প্রয়োজন হতে পারে। এর অন্তত অর্ধেক পানি থেকে আসা উচিত, আর বাকি অংশ অন্যান্য তরল বা পানীয় থেকে আসতে পারে, বলছেন গুসটাশ।
দুধকেও দৈনিক তরল চাহিদার অংশ ধরা যায়। তবে এতে ক্যালরি ও প্রাকৃতিক চিনি থাকে। এমনকি স্কিম মিল্কেও প্রতি কাপ ৯০ ক্যালোরি থাকে।
দুধ একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ হতে পারে। পুষ্টি নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন তিন কাপ দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়, যা ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং প্রোটিন সরবরাহ করে।
সারাদিন হাইড্রেট থাকার উপায় কী?
পানি এবং দুধ দুটিই শরীরকে হাইড্রেট করে। তবে সারাদিনে নিয়মিত এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে তরল গ্রহণ করাই সবচেয়ে কার্যকর।
আর্কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিট অ্যান্ড হাইড্রেশন অপটিমাইজেশন ল্যাবের পরিচালক ব্রেন্ডন পি. ম্যাকডারমট বলেন, “শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সুরক্ষা দিতে হলে সারাদিনে তরল গ্রহণ ও নির্গমনের চক্র বজায় রাখা জরুরি। সকালে একবারে অনেক পানি খেয়ে নেওয়ার চেয়ে সময় ধরে সারা দিন পানি বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।”
হাইড্রেশনের অভাব বোঝার জন্য নিজের শরীরকে নজরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। মাথাব্যথা, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ত্বক ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া, গাঢ় রঙের প্রস্রাব এসবই পানিশূন্যতার লক্ষণ হতে পারে।
“প্রস্রাবের রঙ দেখে বোঝা যায় আপনি সাম্প্রতিক ঘণ্টাগুলোতে কতটা হাইড্রেট ছিলেন। গাঢ় প্রস্রাব মানে আপনি আরও তরল নিতে পারেন, আর হালকা বা স্বচ্ছ প্রস্রাব দেখায় যে এই মুহূর্তে আপনার শরীর ঠিক আছে,” বলেন ম্যাকডারমট।
যদিও কিছু গবেষণা দুধকে পানি থেকে বেশি হাইড্রেটিং বলছে, তবে বাস্তব জীবনে পানি এখনও সেরা ও সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প। দুধের মধ্যে থাকা প্রোটিন, ইলেকট্রোলাইট ও পুষ্টিগুণ ব্যায়ামের পর শরীরের পেশি পুনর্গঠনে সাহায্য করতে পারে। তবে প্রতিদিনের হাইড্রেশনের জন্য সবার আগে প্রাধান্য পাওয়া উচিত সাধারণ বিশুদ্ধ পানি। আর শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী দুধ ও অন্যান্য পুষ্টিকর তরল রাখলে আপনি সারাদিন থাকতে পারেন সতেজ ও সুস্থ।
সূত্র:https://tinyurl.com/bdeymn5d
আফরোজা