ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

অ্যানিমিয়ায় কি আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?

প্রকাশিত: ১৮:৪১, ২৫ জুলাই ২০২৫

অ্যানিমিয়ায় কি আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?

অ্যানিমিয়া, অর্থাৎ রক্তে সুস্থ লাল রক্তকণিকার ঘাটতি, শুধু দেহের সামগ্রিক শক্তিক্ষয়ই ঘটায় না, চোখ ও চোখের পাতার চেহারাতেও আনতে পারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। এই অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় অ্যানিমিক রেটিনোপ্যাথি, অনেক সময় এটিকে ‘অ্যানিমিয়া আইস’ বলেও অভিহিত করা হয়। দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া এর অন্যতম লক্ষণ, যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গগুলি তেমন ধরা পড়ে না।

চোখের এই ক্ষতিগুলো ধীরে ধীরে দেখা দেয় এবং একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ পরীক্ষার মাধ্যমে সেগুলো শনাক্ত করতে পারেন। তবে দুঃসংবাদ এই যে, আপনি যদি অ্যানিমিয়ার উপসর্গ সম্পর্কে সচেতন না থাকেন, তাহলে চোখে হওয়া পরিবর্তনগুলোও হয়তো অন্য কারণে মনে করতে পারেন।

চোখে অ্যানিমিয়ার লক্ষণ কীভাবে ধরা পড়ে?
স্বাভাবিকভাবে আমাদের চোখের ভিতরের পাতা লালচে বা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। এটি রক্তনালীর উপস্থিতির কারণে হয়। কিন্তু যখন এই স্থানে ফ্যাকাশে ভাব দেখা যায়, তখন তা অ্যানিমিয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।

অ্যানিমিয়া থাকলে চোখের সাদা অংশ নীলচে দেখাতে পারে। আর যদি অ্যানিমিয়া রক্তকণিকার ভাঙনের (হিমোলাইসিস) কারণে হয়, তবে চোখের সাদা অংশে হলদেটে রঙ দেখা দিতে পারে।

চোখের রেটিনায় ক্ষত বা রক্তপাত হলে তা দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা করে দিতে পারে। কখনো কখনো এ ধরনের সমস্যা উপসর্গহীনও থাকতে পারে।

কেন অ্যানিমিয়ায় চোখের ক্ষতি হয়?
অ্যানিমিয়ার বিভিন্ন ধরন ও কারণ রয়েছে এবং প্রত্যেকটি চোখে ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। লাল রক্তকণিকায় থাকা হিমোগ্লোবিন চোখসহ শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এই রক্তকণিকার ঘাটতির কারণে চোখে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোয় শুরু হয় নানা ধরনের জটিলতা।

এর কারণ হতে পারে চোখে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোয় রেটিনা বা ম্যাকুলার কোষ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া,চোখে রক্তক্ষরণ,ক্ষুদ্র রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধা,খাদ্য ঘাটতি থেকে উদ্ভূত অপুষ্টিজনিত ক্ষতি,ক্যান্সার, লিভার রোগ বা দীর্ঘস্থায়ী অসুখের প্রভাব,অটোইমিউন রোগ বা অস্থিমজ্জা জনিত রোগের কারণে চোখে প্রদাহ,অ্যানিমিয়াজনিত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় চোখে বিষক্রিয়া,সিকল সেল অ্যানিমিয়ার কারণে রেটিনায় অতিরিক্ত রক্তনালীর গঠন।

শুধুই চোখ দেখে অ্যানিমিয়া নির্ণয় সম্ভব?
না, শুধুমাত্র চোখের পরীক্ষা করে অ্যানিমিয়া চূড়ান্তভাবে নির্ণয় করা যায় না। এর জন্য রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, লাল রক্তকণিকার সংখ্যা ও আকৃতি যাচাই করা প্রয়োজন। তবে চোখের কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তন যেমন রেটিনার ক্ষতি বা রক্তনালীর অস্বাভাবিকতা চিকিৎসককে অ্যানিমিয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। তবে এই উপসর্গগুলো অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিসেও দেখা দিতে পারে, তাই রক্ত পরীক্ষা অপরিহার্য।

চিকিৎসা ও পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা
যদি প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যানিমিয়া ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে চোখের সমস্যা অনেকাংশে সারিয়ে তোলা সম্ভব। চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ভর করে অ্যানিমিয়ার মূল কারণের ওপর। 
যেমন:

খাদ্যতালিকায় আয়রন, ভিটামিন বি১২ ইত্যাদি যুক্ত করা,রক্তকণিকা উৎপাদন বাড়াতে ‘এরিথ্রোপয়েটিন’ নামক ওষুধ গ্রহণ,রক্ত সঞ্চালন,পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ হলে তা সারাতে অস্ত্রোপচার,ক্যান্সার বা দীর্ঘস্থায়ী অসুখের চিকিৎসা।

চিকিৎসা শুরুর পর নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও চোখের পরীক্ষা দরকার পড়ে, যেন রেটিনার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে কি না, তা বোঝা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে চশমা, ওষুধ কিংবা অস্ত্রোপচারও লাগতে পারে।

অ্যানিমিয়ার কারণে চোখে রক্ত জমাট বাঁধা বা রক্তক্ষরণ হলে অনেক সময় দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে, যা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। এই পরিস্থিতিতে চোখের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি করা জরুরি।
চোখে অ্যানিমিয়ার প্রভাব পড়া রোধে প্রথম ধাপ হলো অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করা। অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি যদি থাকেযেমন ক্যান্সার বা পরিপাকতন্ত্রে পুষ্টি শোষণে সমস্যা তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

যাদের ঝুঁকি নেই, তাদেরও কিছু নিয়ম মানলে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব:ধূমপান বন্ধ করুন,আয়রন ও ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন,খাদ্য ঘাটতি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিন,নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চোখের পরীক্ষা করুন।

কোন চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হবেন?
চোখে অ্যানিমিয়াজনিত সমস্যা থাকলে নিম্নোক্ত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

প্রাইমারি কেয়ার ফিজিশিয়ান: যিনি সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিচালনা করেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে রেফার করেন

চোখের ডাক্তার (অপথ্যালমোলজিস্ট/অপ্টোমেট্রিস্ট): চোখ পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেন

হেমাটোলজিস্ট: রক্তজনিত জটিল অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে এই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়

ডায়েটিশিয়ান নিউট্রিশনিস্ট: সঠিক পুষ্টি পরিকল্পনা তৈরি করেন


অ্যানিমিক রেটিনোপ্যাথি বা ‘অ্যানিমিয়া আইস’ হলো এমন একটি অবস্থা, যা অ্যানিমিয়ার কারণে চোখে দেখা দেয়। প্রধান উপসর্গ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া। এটি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়, অনেক সময় বোঝাই যায় না। তবে চোখের নির্দিষ্ট পরীক্ষা ও চিত্রায়নের মাধ্যমে এটি শনাক্ত করা যায়। পুষ্টির ঘাটতি পূরণ, ওষুধ, রক্তসঞ্চালনসহ অ্যানিমিয়ার সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে চোখের অবস্থার উন্নতি সম্ভব। তাই আগে থেকেই সতর্কতা নেওয়া ও নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানোই হতে পারে ভবিষ্যতের দৃষ্টিশক্তি রক্ষার চাবিকাঠি।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/5fcadr3h

আফরোজা

×