ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

পিঠের ব্যথা কমাতে চাচ্ছেন? আগে বাদ দিন এই ৬টি প্রতিদিনের কাজ!

প্রকাশিত: ১৪:১৮, ২৫ জুলাই ২০২৫

পিঠের ব্যথা কমাতে চাচ্ছেন? আগে বাদ দিন এই ৬টি প্রতিদিনের কাজ!

ছবি: সংগৃহীত

পিঠের ব্যথা এমন এক সমস্যা, যা জীবনের কোনো না কোনো সময়ে আমাদের প্রায় সবাইকে ভোগায়। কখনও দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর হালকা ব্যথা, আবার কখনও ঝুঁকে কিছু তুলতে গিয়ে হঠাৎ তীব্র যন্ত্রণা—এসব সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বড় ধরনের চোট বা কোনো শারীরিক সমস্যা এর কারণ হতে পারে, বাস্তবে আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসই পিঠের ব্যথার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ভাগ্যক্রমে, গবেষণায় দেখা গেছে—এই দৈনন্দিন অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করে একটু পরিবর্তন আনলেই পিঠের ব্যথা অনেকটা কমানো সম্ভব এবং চলাফেরাও হয় সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। সঠিক ভঙ্গিতে বসা, সক্রিয় থাকা, ও দীর্ঘসময় বসে থাকা সীমিত করার মতো সাধারণ পরিবর্তনগুলো মেরুদণ্ডের সুস্থতায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্রতিবেদনে আমরা বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করবো এমন ৬টি সাধারণ অভ্যাস যা আপনার পিঠের ক্ষতির কারণ হতে পারে, এবং দেবো কার্যকর কিছু টিপস যা আপনাকে ব্যথামুক্ত, মজবুত ও সচল থাকতে সাহায্য করবে।

১. ভুলভাবে ভারী বস্তু তোলা

ভুল পদ্ধতিতে কিছু তোলা পিঠের নিচের অংশে ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ। কোমর থেকে ঝুঁকে কিছু তোলার ফলে মেরুদণ্ডের নিচের ডিস্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা মাংসপেশির টান, চোট কিংবা ডিস্কের সমস্যা তৈরি করতে পারে। শিশু বা বাজারের ভারী ব্যাগ তুলতেও যদি ঠিকমতো না তোলা হয়, সমস্যা হতে পারে।
সঠিক পদ্ধতি হলো হাঁটু ভাঁজ করে বসে জিনিস তোলা, ভার কাছাকাছি রাখা এবং কোমরের বদলে পায়ের শক্তি ব্যবহার করা।

২. পেশি (কোর) শক্তির অবহেলা

দুর্বল কোর মানে আপনার মেরুদণ্ডের জন্য কম সহায়তা। এতে ডিস্ক ও লিগামেন্টে বাড়তি চাপ পড়ে এবং পিঠে চাপ বাড়ে। অনেকেই সৌন্দর্যের জন্য কোর এক্সারসাইজ করেন, কিন্তু কোর শক্তি ধরে রাখাটা ভঙ্গি, ভারসাম্য ও আঘাত প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্ল্যাঙ্ক, ব্রিজ ও অ্যাবডোমিনাল হোল্ডের মতো ব্যায়াম নিয়মিত করলে পিঠে চাপ কমে ও মেরুদণ্ড সুরক্ষিত থাকে।

৩. হালকা ব্যথা বা অস্বস্তিকে উপেক্ষা করা

অনেক সময় পিঠে হালকা অস্বস্তি বা ব্যথাকে আমরা অবহেলা করি। কিন্তু এসব হতে পারে ডিস্ক ক্ষয়, হারনিয়েশন কিংবা আর্থ্রাইটিসের প্রাথমিক ইঙ্গিত। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ সমস্যা বড় আকার নিতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি, সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা বা বিশ্রামের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা প্রতিরোধ করা যায়।

৪. বসে থাকার সময় কুঁজো হয়ে থাকা

কাজের সময় বা মোবাইল ব্যবহারের সময় দীর্ঘক্ষণ কুঁজো হয়ে বসা মেরুদণ্ডের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে ডিস্ক সংকুচিত হয় এবং পিঠের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে ফরোয়ার্ড হেড পজিশন, কাইফোসিস বা দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা দেখা দিতে পারে।
সঠিকভাবে বসতে হলে পা মেঝেতে সমানভাবে রাখতে হবে, পিঠ সোজা রাখতে হবে এবং লাম্বার সাপোর্টসহ চেয়ার ব্যবহার করতে হবে।

৫. অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম (টেক নেক)

দিনভর নিচের দিকে তাকিয়ে স্ক্রিন দেখার কারণে ‘টেক নেক’ সমস্যা দেখা দেয়। এতে ঘাড় ও কাঁধের ওপর চাপ পড়ে, যা মেরুদণ্ডের গঠনে পরিবর্তন আনে ও ব্যথা সৃষ্টি করে।
প্রতিরোধে ফোন বা ট্যাব চোখের সমতলে ধরে রাখা, নিয়মিত বিরতি নেওয়া ও ঘাড়-হাঁটু স্ট্রেচিং জরুরি।

৬. এক কাঁধে ব্যাগ বহন করা

একপাশে ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাক বহনের ফলে শরীর ভারসাম্য হারায় এবং মেরুদণ্ডের গঠন বিকৃত হয়। এতে একদিকে চাপ পড়ে ও পেশির ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা পিঠের দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার কারণ হতে পারে।
সমাধান—কাঁধ পাল্টে ব্যাগ বহন করা, ওজন কমানো কিংবা দু’কাঁধে সমানভাবে চাপ পড়ে এমন ব্যাকপ্যাক ব্যবহার করা।

পিঠের ব্যথার পেছনে সবসময় বড় ধরনের আঘাত দায়ী নয়। অনেক সময় আমরা প্রতিদিনের ছোট ছোট ভুল অভ্যাসের মাধ্যমে নিজের অজান্তেই মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টি করি।
ভালো খবর হলো—সচেতনতা ও অল্প কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমেই এই সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা যায়। নিজের চলাফেরা, ভঙ্গি ও দৈনন্দিন অভ্যাসে সচেতনতা বাড়ালে পিঠের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।
পিঠ প্রতিদিন আপনাকে ভর করে রাখে, এবার সময় হলো আপনিও আপনার পিঠের যত্ন নিন।

আবির

×