
ছবি: সংগৃহীত।
হার্ট ও রক্তনালির কাজ কখনো বন্ধ থাকে না। কিন্তু শরীরে বিপদ দেখা দেওয়ার আগ পর্যন্ত এরা তেমন কোনো সতর্ক সংকেত দেয় না। তবে হার্ভার্ড-সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘‘হার্টের অবস্থা জানতে চাইলে প্রথমে ত্বকের দিকে তাকান।’’ এ কথার সঙ্গে একমত আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজি (AAD)। তাদের মতে, বুক ধড়ফড় বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ার মাস কিংবা বছর আগে ত্বকে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে যা হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
হার্ট সমস্যা থাকলে শরীরে রক্ত সঞ্চালনের গতিপথে ব্যাঘাত ঘটে, যা সরাসরি ত্বকে প্রকাশ পায়। যেমন- অক্সিজেনের অভাবে ত্বক নীলচে হয়ে যাওয়া, চোখ বা গাঁটে চর্বিযুক্ত বৃদ্ধি দেখা দেওয়া, অথবা পায়ের রঙ বদলে যাওয়া। এই লক্ষণগুলো হার্টের সমস্যা নিশ্চিত করে না, তবে এগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
হার্টের সমস্যায় ত্বকে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
১. পা ও পায়ের পাতায় স্থায়ী ফোলা ভাব: এটি ইঙ্গিত দেয় যে হার্ট যথেষ্ট শক্তভাবে রক্ত পাম্প করতে পারছে না, ফলে রক্ত নিচের দিকে জমে যাচ্ছে।
২. নীলচে বা বেগুনি দাগ যা গরমেও গোলাপি হয় না: এটি সায়ানোসিস নামে পরিচিত এবং রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকার সংকেত দেয়।
৩. বাহু বা পায়ে নীলচে-বেগুনি জালের মতো ছোপ: ‘লিভেডো রেটিকুলারিস’ নামক এই অবস্থা ছোট ধমনির বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার লক্ষণ।
৪. চোখ বা গাঁটে হলুদ-কমলা, মোমের মতো বৃদ্ধি: এক্সানথেলাসমা বা এক্সানথোমা নামে পরিচিত এসব বৃদ্ধি বিপজ্জনক মাত্রার কোলেস্টেরলের ইঙ্গিত দেয়।
৫. রাতারাতি মোমের মতো ফুসকুড়ির মতো গুটি: ‘ইরাপটিভ এক্সানথোমা’ খুব বেশি ট্রাইগ্লিসারাইড বা নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
৬. নখ বাঁকানো ও আঙুলের ডগা ফুলে যাওয়া: ‘ক্লাবিং’ নামে পরিচিত এই অবস্থা দীর্ঘমেয়াদী হার্ট বা ফুসফুস সমস্যার লক্ষণ।
৭. নখের নিচে লালচে-বরই রঙের রেখা: ‘স্নিপ্লিন্টার হেমারেজ’ বা ছোট রক্ত জমাট যা হৃদয়ের সংক্রমণ (এন্ডোকার্ডাইটিস)-এর কারণে হতে পারে।
৮. শরীরের যেকোনো জায়গায় মোমের মতো মসৃণ গাঁট: এটি হার্টের পেশিতে প্রোটিন জমে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে (সিস্টেমিক অ্যামিলয়ডোসিস)।
৯. আঙুল বা আঙুলের ডগায় মটরের মতো ব্যথাযুক্ত গাঁট: ‘অসলার নোড’ নামে পরিচিত, এটি ইনফেকটিভ এন্ডোকার্ডাইটিসের ক্লাসিক লক্ষণ।
১০. হাতের তালু বা পায়ের পাতায় লালচে-বাদামি ব্যথাহীন দাগ: ‘জানওয়ে লেশন’ নামেও পরিচিত, এটি একই ইনফেকশনের আরেকটি লক্ষণ।
১১. শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরসহ সমতল, বৃত্তাকার দাগ: এটি ‘ইরিথিমা মার্জিনেটাম’ যা রিউম্যাটিক ফিভারের সংকেত দেয়।
১২. ছোট শিশুদের ঠোঁট ফেটে যাওয়া ও শরীরে র্যাশ: ‘কাওয়াসাকি ডিজিজ’-এর লক্ষণ, যা করোনারি ধমনিকে ফুলিয়ে দিতে পারে।
কী করবেন এসব লক্ষণ দেখলে?
প্রথমেই আতঙ্কিত হবেন না। অনেক সময় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, আঘাত, বা ঠান্ডা আবহাওয়াতেও এসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে। তবে এগুলো থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো ধরা পড়লে হার্টের সমস্যা সহজেই প্রতিরোধযোগ্য। চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা, ইকোকার্ডিওগ্রাম বা ভাস্কুলার ইমেজিংয়ের নির্দেশ দিতে পারেন। ত্বকের যেকোনো পরিবর্তনের ছবি তুলে রাখুন, যাতে চিকিৎসক অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে পারেন।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর
এগুলো কি হার্ট রোগের নিশ্চয়তা দেয়?
না। তবে এটি বিপদের ‘রেড ফ্ল্যাগ’। আগুন লাগার আগে ধোঁয়া দেখার মতোই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
হার্টের সমস্যা সারলে এসব চর্ম লক্ষণও সেরে যায় কি?
বেশিরভাগ সময় হ্যাঁ। যেমন কোলেস্টেরল কমালে এক্সানথোমা ছোট হয়ে আসে।
কোন লক্ষণগুলো বেশি জরুরি?
যেমন- যে নীলচে দাগ গরমেও গোলাপি হয় না, কিংবা আঙুলে ব্যথাযুক্ত গাঁট- এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
গাঢ় ত্বকে রঙের পরিবর্তন ভিন্ন হয় কি?
হ্যাঁ। সায়ানোসিস নীলচে না হয়ে ধূসর বা সাদাটে দেখাতে পারে।
শুধু জীবনধারা পরিবর্তনে চর্মলক্ষণ কমে যাবে?
জীবনধারা বদল সাহায্য করে, কিন্তু অনেক সময় ওষুধ প্রয়োজন হয় নিরাপদ মাত্রায় কোলেস্টেরল আনতে।
ত্বকের পরিবর্তনকে অবহেলা করা উচিত নয়। এসব লক্ষণ সময়মতো ধরে চিকিৎসা নিলে জীবনরক্ষাও সম্ভব হতে পারে।
মিরাজ খান