ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

মানুষের ফুসফুস কি রক্ত তৈরি করে? গবেষণায় উঠে এলো চমকপ্রদ তথ্য

প্রকাশিত: ০৯:০০, ২৪ জুলাই ২০২৫

মানুষের ফুসফুস কি রক্ত তৈরি করে? গবেষণায় উঠে এলো চমকপ্রদ তথ্য

ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞানীদের মতে, রক্ত শুধু অস্থিমজ্জাতেই (bone marrow) তৈরি হয়—এ ধারণা বদলে দিতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকো (UCSF)–এর এক যুগান্তকারী গবেষণা। এতে দেখা গেছে, মানুষের ফুসফুসেও রয়েছে সক্রিয় রক্ত গঠনের স্টেম সেল, যা লাল রক্তকণিকা, প্লেটলেট ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধক কোষ তৈরি করতে সক্ষম।

২০১৭ সালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি সম্প্রতি আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে। ‘Blood’ নামক সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় UCSF-এর গবেষকরা জানান, ইঁদুরের ফুসফুসে পাওয়া গিয়েছিল এমন কোষ যা ওই প্রাণীর অর্ধেকের বেশি প্লেটলেট তৈরি করছিল—এমন কিছু যা আগে কখনো কল্পনাও করা হয়নি।

স্টেম সেল পরীক্ষায় চমক

গবেষকরা ফুসফুস ও অস্থিমজ্জা থেকে পৃথকভাবে স্টেম সেল সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে তা বাড়িয়ে দেখেন। ফলাফলে দেখা যায়, উভয় প্রকার স্টেম সেলই কার্যকর হলেও ফুসফুস-উৎপন্ন কোষগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি লাল রক্তকণিকা ও প্লেটলেট উৎপাদন করছিল। অন্যদিকে, অস্থিমজ্জা থেকে পাওয়া কোষগুলো বেশি পরিমাণে রোগ প্রতিরোধক কোষ তৈরি করছিল।

এই গবেষণার প্রধান গবেষক ড. মার্ক লুনি বলেন, “আমাদের ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ পরীক্ষায় ফুসফুসের স্টেম সেলগুলো যেমন কার্যকর, তেমনই তারা লাল রক্তকণিকা ও মেগাকারিওসাইট (প্লেটলেটের উৎস কোষ) উৎপাদনে বেশ দক্ষ।”

হেমাটোলজির নতুন দিগন্ত

এই আবিষ্কার শুধু শারীরবিদ্যার পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনবে না, বরং স্টেম সেল থেরাপি ও বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন চিকিৎসায়ও নতুন সুযোগ এনে দেবে। গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে যেসব বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়, তার প্রায় ২০ শতাংশ স্টেম সেল আসলে ফুসফুস থেকে আসতে পারে—যার মানে দাঁড়ায়, এই অঙ্গও গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস।

ড. লুনি বলেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ক্যান্সার ও রক্তের রোগের চিকিৎসায় মূল ভূমিকা পালন করছে। এখন দেখা যাচ্ছে, ফুসফুসও হতে পারে আরেকটি মূল্যবান উৎস।’

কেন ফুসফুসে রক্ত তৈরি হয়?

এই প্রশ্নের উত্তর এখনও পরিষ্কার নয়। তবে গবেষকরা ধারণা করছেন, ফুসফুস, যেহেতু শরীরের অক্সিজেন চক্রের কেন্দ্রবিন্দু, তাই অতিরিক্ত রক্তকণিকার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহে ভূমিকা রাখতে পারে। এটি হতে পারে শরীরের জরুরি অবস্থায় সক্রিয় হওয়া একটি ‘ব্যাকআপ সিস্টেম’।

এই যুগান্তকারী আবিষ্কার মানবদেহ সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ায় নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর প্রভাব আগামী দিনগুলোতে আরও স্পষ্ট হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

আরো পড়ুন  

×