ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের নতুন আগাম সংকেত শনাক্ত করলেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৬:১০, ২৫ জুলাই ২০২৫

অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের নতুন আগাম সংকেত শনাক্ত করলেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা

ছবি: প্রতীকী

অগ্ন্যাশয় ক্যানসার বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম বড় সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান ডিয়েগোর গবেষকরা প্রদাহ (ইনফ্লামেশন) এবং প্যানক্রিয়াটিক (অগ্ন্যাশয়) ক্যানসারের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ আবিষ্কার করেছেন। তারা বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছেন STAT3 নামক প্রোটিনের ওপর। এই প্রোটিন টিউমারের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং ITGB3 জিনকে সক্রিয় করে। গবেষণায় দেখা গেছে STAT3 ব্লক করলে টিউমারের বিকাশ ধীর হয়।

গবেষকরা একটি জিনের ‘STRESS UP’ সিগনেচার বা জেনেটিক স্বাক্ষর চিহ্নিত করেছেন যা প্রাক-ক্যানসার পরিস্থিতি চিহ্নিত করতে সাহায্য করতে পারে এবং চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে।

২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে ৫ লাখেরও বেশি নতুন অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের ঘটনা এবং প্রায় সমান সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। এই রোগ সাধারণত দেরিতে ধরা পড়ে এবং তার আক্রমণাত্মক প্রকৃতির জন্য এটি মারাত্মক। তবে এখন প্রাক-ক্যানসার কোষের উপস্থিতি আগাম জানিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন একটি জীববৈজ্ঞানিক সতর্কতা সিস্টেম আবিষ্কৃত হয়েছে।

অগ্ন্যাশয় ক্যানসার কী?

অগ্ন্যাশয় ক্যানসার হলো একটি রোগ যেখানে প্যানক্রিয়াসের টিস্যুতে ক্যানসার কোষ জন্মায়। প্যানক্রিয়াস (অগ্ন্যাশয়) হলো পাকস্থলীর পেছনে অবস্থিত একটি গ্রন্থি যা হজম এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধূমপান, পারিবারিক ইতিহাস, দীর্ঘস্থায়ী টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং দীর্ঘস্থায়ী প্যানক্রিয়াটাইটিস প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার বা অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের ঝুঁকির কারণ।

প্রারম্ভিক পর্যায়ে লক্ষণ সাধারণত অস্পষ্ট বা অনুপস্থিত হওয়ার কারণে এই রোগ শনাক্তকরণ কঠিন।

প্যানক্রিয়াটিক ডাক্টাল অ্যাডেনোকার্সিনোমা (PDAC) - মারাত্মক ধরন

PDAC হলো সবচেয়ে সাধারণ ও আক্রমণাত্মক ধরনের প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার। এর ৫ বছর বাঁচার হার ১০% এরও কম। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৬২,০০০ এর বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। অধিকাংশ রোগী যখন ধরা পড়ে তখন রোগটি অনেক আগেই ছড়িয়ে পড়ে, তাই চিকিৎসা জটিল।

নতুন আবিষ্কার: STAT3 প্রোটিন এবং STRESS UP জিন সিগনেচার

গবেষকরা দেখেছেন, চাপ বা প্রদাহজনিত অবস্থায় STAT3 সক্রিয় হয়, যা টিউমারের বৃদ্ধি, অভিযোজন, চিকিৎসার প্রতিরোধ এবং ছড়িয়ে পড়াকে ত্বরান্বিত করে। STAT3 প্যানক্রিয়াস কোষে ITGB3 নামে একটি জিন সক্রিয় করে, যা টিউমার দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

দুর্ভাগ্যবশত, প্রচলিত চিকিৎসা যেমন কেমোথেরাপিও STAT3 সক্রিয় করতে পারে, যা কিছু টিউমারকে চিকিৎসার প্রতি প্রতিরোধী করে তোলে। তবে STAT3 এর কার্যক্রম বন্ধ করলে টিউমার বিকাশ ধীর হয়, যা ভবিষ্যতে নতুন চিকিৎসার পথ খুলে দিতে পারে।

‘STRESS UP’ সিগনেচার হলো STAT3 সক্রিয় করার মাধ্যমে পরিচালিত ১০টি জিনের একটি জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট। এটি ক্যানসারের প্রারম্ভিক স্তর থেকে শুরু করে প্রতিরোধী টিউমার ও মেটাস্টেসিস পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায় চিহ্নিত করতে পারে।

প্রারম্ভিক শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার সম্ভাবনা

গবেষকরা আশা করছেন, এই জিনগুলোর কার্যকারিতা বুঝে নতুন লক্ষ্যভিত্তিক থেরাপি তৈরি করা যাবে। ইতিমধ্যেই একটি থেরাপি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে যা প্রতিরোধী ক্যানসার রোগীদের জন্য।

ডেভিড চেরেশ বলেন, ‘আমরা এই জিনগুলোর প্রত্যেকটির ভূমিকাকে নির্দিষ্টভাবে পরীক্ষা করছি, যাতে নতুন ও নির্দিষ্ট চিকিৎসা তৈরি করা যায়।’

এছাড়া বাজারে ইতোমধ্যে এমন কিছু ওষুধ আছে যা STAT3 সক্রিয়তা বন্ধ করে, তাই ভবিষ্যতে এসব ওষুধের পুনঃব্যবহারও সম্ভব হতে পারে।

এই আবিষ্কার অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য একটি শক্তিশালী নতুন হাতিয়ার হতে যাচ্ছে, যা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাকে আরও কার্যকরী করে তুলবে।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×