
ছবি: সংগৃহীত
চাঁদ অনেকটা আয়নার মতো কাজ করে। এটি সূর্যের আলোর একটি অংশ শোষণ করে আরেকটি অংশ পৃথিবীতে প্রতিফলিত করে পাঠায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা যেভাবে চাঁদকে ধূসর-সাদা রঙে দেখি, সেটিই আসলে চাঁদের প্রকৃত রং। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, কখনো কখনো কেন চাঁদ লালচে, কমলা বা নীলচে দেখায়?
চাঁদ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। কখনো সেটিকে দেখা যায় বিশাল ধবধবে সাদা থালার মতো, কখনো ছোট আর নিষ্প্রভ। কখনো ছড়ায় রূপালি জোৎস্না, আবার কখনো রঙের ভিন্নতায় পরিচিত হয় “নীল চাঁদ”, “রক্তচাঁদ” বা “স্ট্রবেরি মুন” নামে।
এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। চাঁদ যখন আকাশের অনেক উঁচুতে অবস্থান করে, তখন সূর্যের আলোকে তুলনামূলকভাবে কম পথ পাড়ি দিতে হয়। ফলে আলো বেশি বিচ্ছুরিত হয় না এবং সূর্যের সব সাদা উপাদানই পৃথিবীতে পৌঁছে যায়। এ কারণে তখন চাঁদকে তার স্বাভাবিক ধূসর-সাদা রূপে দেখা যায়।
কিন্তু যখন চাঁদ দিগন্তের কাছাকাছি থাকে, তখন সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডলের একটি ঘন স্তরের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে। এই সময় নীল ও বেগুনি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো ছড়িয়ে পড়ে, আমাদের চোখে পৌঁছায় না। বরং লাল ও কমলা রঙের দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বেশি থাকে—ফলে তখন চাঁদকে হলুদ, কমলা বা লালচে দেখায়।
চাঁদের রঙের নাটকীয় পরিবর্তনের সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ হলো ব্লাড মুন। চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্যের আলো সরাসরি চাঁদে পৌঁছাতে পারে না। তখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে সূর্যের কিছু আলো চাঁদের দিকে যায়। এই সময় আমাদের বায়ুমণ্ডল নীল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে এবং শুধুমাত্র লাল ও কমলা তরঙ্গদৈর্ঘ্য চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছায়। এ কারণে তখন চাঁদকে গভীর লাল বা কমলা দেখায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পুরো ঘটনাটি আলোর প্রতিফলন, বিচ্ছুরণ এবং বায়ুমণ্ডলের গঠন ও ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। তাই চাঁদের প্রকৃত রং ধূসর হলেও, আমাদের চোখে সেটি মাঝে মাঝে নানা রঙে ধরা দেয়।
শেখ ফরিদ