ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

সবজি খেতে বিয়ে বাড়ির ছোঁয়া! দক্ষিণগ্রামে ‘গ্যাপ’ চাষে কৃষি বিপ্লব

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ২৫ জুলাই ২০২৫

সবজি খেতে বিয়ে বাড়ির ছোঁয়া! দক্ষিণগ্রামে ‘গ্যাপ’ চাষে কৃষি বিপ্লব

দক্ষিণগ্রামে গ্যাপ পদ্ধতির সবজি চাষ এখন শুধু কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রামে নয়, দেশের অন্যান্য কৃষি অঞ্চলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। পদ্মবিলের জন্য খ্যাত দক্ষিণগ্রাম এবার ব্যতিক্রমী কৃষিপ্রযুক্তি ‘গ্যাপ’ পদ্ধতির সফল প্রয়োগে নতুন নজির গড়েছে।

প্রথম দেখায় যেকোনো দর্শকের মনে হবে, এ যেন কোনো বিয়েবাড়ির সাজসজ্জা! মাঠজুড়ে ঝকঝকে গেট, 'স্বাগতম' লেখা ব্যানার, নির্দেশনামূলক বোর্ড "জমিতে খাওয়া, পানি পান ও ধূমপান নিষেধ", আর ক্ষেতের চারপাশে নেটের ফেন্সিং। এই চমকপ্রদ আয়োজন করেছেন গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম, যিনি এক সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন।

অবসরজীবনে ‘পার্টনার প্রকল্প’-এর অধীনে গ্যাপ পদ্ধতিতে বরবটি চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথমদিকে এলাকার মানুষ বিষয়টিকে কৌতুক হিসেবে নিলেও এখন তারাই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।

আবুল কাশেমের পাশে মফিজুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম একই পদ্ধতিতে চাষ করছেন লাউ, করলা, পেঁপে ইত্যাদি। তারা জানান, এই পদ্ধতিতে জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা ব্যবহৃত হওয়ায় পরিবেশ দূষণের হার কমে গেছে এবং উৎপাদিত সবজিও সম্পূর্ণ বিষমুক্ত।


স্থানীয় কৃষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, “প্রথমে অবাক হয়েছিলাম, কিন্তু এখন বুঝি এই পদ্ধতি স্বাস্থ্যসম্মত, লাভজনক এবং পরিবেশবান্ধব।”

বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিণা আক্তার জানান, “এটাই আমাদের উপজেলায় প্রথম ‘গ্যাপ’ ভিত্তিক সবজি চাষ। চারটি প্রদর্শনী প্লট রয়েছে, আর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে। এতে কৃষকদের আয় গড়ে ২০% পর্যন্ত বাড়বে।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, “জেলার ১৭টি উপজেলায় এখন গ্যাপ পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে। এর ফলে মাটির গুণমান রক্ষা পাচ্ছে, পরিবেশ দূষণ কমছে এবং রপ্তানিযোগ্য মানের নিরাপদ ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।”

দক্ষিণগ্রামে গ্যাপ পদ্ধতির সবজি চাষ এখন আর শুধু একটি উদ্যোগ নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি কৃষি-আন্দোলন, যা বদলে দিচ্ছে গ্রামবাংলার ভাবনা ও চাষাবাদের ধরণ।

Jahan

×