ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন, ২৮ বছরের দুর্ভোগের অবসান

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:৩৯, ২৬ জুলাই ২০২৫

জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন, ২৮ বছরের দুর্ভোগের অবসান

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ২৮ বছর পর নির্মাণ শুরু হয়েছিল সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের হাজী বাজার থেকে মোল্লার চর হয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কের কাঙ্ক্ষিত বক্স কালভার্ট। তবে স্বস্তির এই উন্নয়ন-প্রকল্প ঘিরেই উল্টো তৈরি হয় জনদুর্ভোগ।

নিন্মমানের নির্মাণসামগ্রী, অনিয়ম আর গাফিলতির অভিযোগে নির্মাণকাজ শুরু হতে না হতেই জনরোষে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্প। এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেন—এই দুর্বল কাঠামো আগামী বর্ষা মৌসুমে টিকবে না, বরং তাদের আবারও বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

পুরনো কালভার্টটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, তৎকালীন সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিনের উদ্যোগে। সেটিও বহু বছর ধরে ছিল ভাঙাচোরা আর অকেজো। বর্ষায় হাঁটু পানি মাড়িয়ে স্কুলে যেত শিক্ষার্থীরা, বাজারে পৌঁছাতে হতো পাড়ি দিতে দুর্ভোগের জলাশয়। ফসল পরিবহন, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ কিংবা হাটবাজারে যাতায়াতের জন্য বিকল্প পথ ছিল না।

অবশেষে এলাকাবাসীর দাবি ও দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নতুন করে গ্রহণ করা হয় ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প। বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়, আর কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল মাদারীপুরের এম/এস শাহ মাদার ইন্টারন্যাশনাল।

কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ—কম দামের রড, দুর্বল ভিত্তি, নিম্নমানের কংক্রিট, হাতের জোড়াতালির মতো কাজ—সব মিলিয়ে যেন উন্নয়ন নয়, প্রতারণাই প্রতীয়মান হচ্ছিল। ফলে নির্মাণের মাঝপথেই এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।

এই অবস্থায় দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন। সরেজমিনে তদন্ত করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ডাকান।শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার জন্য ও নির্দেশ দেন।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়—ঠিকাদার মোজাম্মেল হোসেনকে অফিসে তলব করা হয়েছে এবং দ্রুত কাজ সম্পন্ন করে মানুষ ও অটোরিকশা সিএনজি চলাচলের ব্যবস্থা সহ কালভার্টের বাকী কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।তারই ফলশ্রুতিতে কালভার্টে বালু ভরাট সহ অন্যান্য কাজ ও করা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য।

মোল্লার চর সংলগ্ন হাজী বাজার সড়কটি শুধু একটি গ্রামের নয়—আশপাশের একাধিক গ্রামের শত শত শিক্ষার্থী, কৃষক, নারী-পুরুষের প্রতিদিনের চলাচলের প্রধান মাধ্যম। বর্ষায় এই রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হলে পুরো অঞ্চল কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক মেম্বার বলেন অবশেষে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ এবং এলাকাবাসীর সক্রিয় প্রতিবাদের কারণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পথ চলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ পথে চলাচল করা মনির হোসেন বলেন —দীর্ঘ ২৮ বছর পর পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়নকাজেই যদি অনিয়ম হয়, তবে সাধারণ মানুষ আর কীভাবে বিশ্বাস করবে “উন্নয়ন” শব্দটিকে? তাই প্রয়োজন সঠিক তদারকি, জবাবদিহি, এবং সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন।

আসিফ

×