
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বুধবার (২৩ জুলাই) ‘জুলাইয়ে হাসিনার ৩৬ দিন (Hasina 36 Days in July)’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রকাশ করেছে। এতে গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া গোপন নির্দেশনার ভয়ঙ্কর বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কীভাবে আন্দোলনের সময় জুলাইয়ের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁকে গুলি করা ও মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরি প্রসঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ফেঁসে যাচ্ছে যে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলছে। আমাকে পাঁচবার রিপোর্ট লিখতে হয়েছে। প্রতিবার রিপোর্ট লিখি, জমা দিতে যাই, পুলিশের মনঃপূত হয় না।’
পতিত শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একটি ফোনালাপ ফাঁস করেছে আল জাজিরা। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘বডির পোস্টমর্টেম করা হইছে তো? রংপুর মেডিকেল করেছেন, তাহলে আমাদেরকে রিপোর্ট দিতে এতো সময় লাগবে কেন? লুকোচুরি কে খেলতেছে, রংপুর মেডিকেল?’
ডা. রাজিবুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার যেটা মনে হয়েছে যে, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেই আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে কারসাজি (টেম্পারিং) করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।’
২০২৪ সালে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নিহত হন ১,৪০০-র বেশি এবং আহত হন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটের অনুসন্ধানে গোপন অডিও ও তথ্যের ভিত্তিতে উঠে এসেছে, কীভাবে পতিত হাসিনার সরকার সেই সময় আন্দোলনকারীদের দমন করতে নিষ্ঠুর ও মরণঘাতী কৌশল নিয়েছিল।
একটি ফোনালাপে হাসিনা তার এক কর্মকর্তাকে বলেন, ‘এবারে আর কোনো কথা নাই। এবার একবারে শুরু থেকেই দিবা। তোমাদের লোকজন যেন গলির মধ্যে থাকে। যখন আন্দোলনকারীদের তাড়া করা হবে, তারা ওখানেই ঢুকবে—তখন যা যা করতে হবে, করবা।’
আরেকটি ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনকারীদের দমাতে কীভাবে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যেখানেই কোনো জমায়েত, উপর থেকে শুরু হবে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে কয়েকটা জায়গায়। এখন ওরা (নিরাপত্তা বাহিনী) প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে। যেখানেই পাবে, সোজা গুলি করবে।’
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আল জাজিরাকে জানান, “এই অভিযানের একটি কোডনাম ছিল ‘অপারেশন ক্লিন ডন’। ড্রোন দিয়ে খোঁজ করে যেখানে সবচেয়ে বেশি আন্দোলনকারী জড়ো হয়েছিল, সেখানে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাদের হত্যা করা হয়।”
শেষ পর্যন্ত গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ভারতে পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত।
সূত্র: আল জাজিরা।
রাকিব