
ছবি: প্রতীকী
শুধু ব্যক্তি-গোপনীয়তা নয়, এআই এখন পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপরও ভয়ঙ্কর ছায়া ফেলছে, এমনটাই জানিয়েছে জাতিসংঘের পরিবেশ সংক্রান্ত সংস্থা UNEP। বিশ্বজুড়ে এআই প্রযুক্তি পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ কম্পিউটিং শক্তি প্রয়োজন, তা সরবরাহে নির্ভর করতে হচ্ছে ডেটা সেন্টারগুলোর ওপর। আর এসব ডেটা সেন্টার চালাতে লাগে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। ফলে এআই ব্যবহারের পরোক্ষ ফল হিসেবে কার্বন নিঃসরণ বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, আগামী এক-দু’বছরের মধ্যেই এই নিঃসরণের হার দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।
একটি বাস্তব উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাইক্রোসফট ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কার্বন নির্গমণ বাড়িয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ, যত বেশি চ্যাটবট, লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তৈরি হবে, পরিবেশ ততই বিপদের দিকে এগোবে।
প্রতিদিন পানির খরচ—২০ লক্ষ লিটার!
ডেটা সেন্টারগুলোকে ঠান্ডা রাখতে প্রতিদিন ব্যবহার করা হয় লক্ষ লক্ষ লিটার পানি। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ডেটা সেন্টার ঠান্ডা রাখতে দিনে লাগে প্রায় ২০ লক্ষ লিটার পানি—যা দিয়ে প্রায় ৬,৫০০ পরিবারের পানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
বিশ্বজুড়ে ডেটা সেন্টারগুলো বছরে ব্যবহার করছে ৫৬০ বিলিয়ন লিটার পানি, এবং ২০৩০ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১,২০০ বিলিয়ন লিটারে। পানযোগ্য মিষ্টি পানির ওপর এই চাপের ফলে মানুষের পানির জোগান হুমকির মুখে পড়তে পারে, বিশেষত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মতো অঞ্চলগুলোতে।
হার্ডওয়্যারের কারণে ই-বর্জ্য বেড়ে চলেছে
এআই মডেল চালাতে প্রয়োজন হয় চিপস, জিপিইউসহ নানা ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ। সময়ের সঙ্গে এসব হার্ডওয়্যার দ্রুতই পুরনো হয়ে যায় এবং পরিণত হয় ই-বর্জ্যে। ফলে মাটিতে লেড, পারদ-এর মতো ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা বাড়ছে। এর প্রভাবে ঐ এলাকার জমিতে চাষাবাদ বা পানযোগ্য পানির যোগান অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
অতল খনন, অনিয়ন্ত্রিত খনিজ উত্তোলন
এআই চিপ তৈরির জন্য প্রয়োজন দুষ্প্রাপ্য খনিজ, যেমন টাইটেনিয়াম, ইউরেনিয়াম, লিথিয়াম, গ্রাফাইট। এসব খনিজ উত্তোলনে চলছে অনিয়ন্ত্রিত ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে খনন। উদাহরণস্বরূপ, ইউক্রেনে লুকিয়ে থাকা খনিজ ভাণ্ডার উত্তোলনে মার্কিন প্রশাসন ‘চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে’ সম্মতি আদায় করেছে বলে প্রতিবেদন দাবি করছে। এসব খনিজের পেছনে মূলত কাজ করছে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, যারা ভবিষ্যতের এআই গবেষণার জ্বালানি এখন থেকেই সংগ্রহে ব্যস্ত।
সব মিলিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ে উঠেছে আধুনিক যুগের ‘হীরক রাজার গবেষক’। সামনে থেকে মানুষকে চোখ ধাঁধানো চমক দেখালেও, পিছন থেকে নিঃশব্দে শুষে নিচ্ছে বিদ্যুৎ, পানি আর প্রকৃতির ভারসাম্য।
প্রযুক্তিকে দোষ না দিয়ে বরং সময় এসেছে বিকল্প, পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির কথা ভাবার। না হলে ভবিষ্যতের প্রজন্ম হয়তো নস্টালজিয়া করে বলবে—‘একটা সময় ছিল, যখন গাছপালা চোখে পড়ত!’
সূত্র: https://tv9bangla.com/technology/ai-hardware-construction-is-having-a-significant-impact-on-the-environment-for-data-centers-1215637.html
রাকিব