
স্ট্রোক এক মারণঘাতী স্বাস্থ্যঝুঁকি, যা সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের জীবনকে নাড়িয়ে দেয়। ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশনের গ্লোবাল ফ্যাক্ট শিট ২০২৫ অনুযায়ী, প্রতি ২.৬ সেকেন্ডে একজন নতুন ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ অধিকাংশ মানুষই স্ট্রোকের সূক্ষ্ম ও প্রথম দিককার লক্ষণগুলো চেনেন না, বা চিনেও এড়িয়ে যান সাধারণ ক্লান্তি, বয়স বা স্ট্রেস ভেবে।
তবে সময় মতো এই লক্ষণগুলো চিনে ঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে বাঁচানো যেতে পারে জীবন, এমনকি সম্পূর্ণভাবে সুস্থও হওয়া সম্ভব।
নিচে এমন ৭টি লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো অনেকেই উপেক্ষা করলেও কখনোই করা উচিত নয়—
🔸 ১. হঠাৎ মুখ বা শরীরের একপাশে ঝিঝি ধরা বা অসাড় অনুভব
যদি আপনি অনুভব করেন, হঠাৎ হাত বা মুখের এক পাশে ঝিঝি ধরেছে, বা "ঘুমিয়ে গেছে" বলে মনে হচ্ছে, সেটি হতে পারে স্ট্রোকের প্রথম লক্ষণ। বিশেষত যদি সেটা তাড়াতাড়ি না সারে এবং কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ঘটে।
🔸 ২. বিভ্রান্তি বা কথা বলতে হঠাৎ অসুবিধা
"ব্রেইন ফগ" ভেবে অনেকেই উপেক্ষা করেন, কিন্তু হঠাৎ বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়া, জড়ানো ভাষায় কথা বলা বা এক কথায় আটকে যাওয়া—এসবই হতে পারে মস্তিষ্কের ভাষাকেন্দ্রে (যেমন ব্রোকা/ওয়ারনিকি) স্ট্রোকের প্রভাব।
🔸 ৩. এক বা দুই চোখে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা বা হারিয়ে যাওয়া
স্ক্রিনে বেশি সময় কাটানোর কারণে চোখ ক্লান্ত—এমন ধারণা করা স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ করে চোখে অন্ধকার দেখা, ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা এক চোখে কিছুই না দেখা গেলে, সেটি হতে পারে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ।
📌 PMC-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রোক বেঁচে যাওয়া ৮৪% রোগী দৃষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগেছিলেন।
🔸 ৪. হঠাৎ মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো
কানে সমস্যা না থাকলেও হঠাৎ ভারসাম্যহীনতা, মাথা ঘোরা বা ঠিকভাবে হাঁটতে না পারা স্ট্রোকের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে। মস্তিষ্কের সেরেবেলাম অংশে ক্ষতি হলে এমনটা ঘটে।
🔸 ৫. হঠাৎ অকারণ তীব্র মাথাব্যথা
সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে আলাদা, স্ট্রোকজনিত মাথাব্যথা হয় হঠাৎ, প্রবল এবং কারণ ছাড়া। যদি আপনি মাইগ্রেনে না ভোগেন, তবুও হঠাৎ এমন ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। বিশেষ করে এটি হতে পারে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের লক্ষণ।
🔸 ৬. হঠাৎ ক্লামজ বা জিনিস ফেলে দেওয়া
হাতের জিনিস পড়ে যাচ্ছে, হঠাৎ হাঁটার সময় হোঁচট খাচ্ছেন—সবসময় ক্লান্তি দায়ী নয়। স্ট্রোক হলে শরীরের পেশির নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে এই অস্বাভাবিক অস্থিরতা দেখা দেয়।
🔸 ৭. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
ভালো ঘুমের পরও যদি আপনি খুব ক্লান্ত বোধ করেন, বা হঠাৎ করে "অফ" অনুভব করেন—তবে তা নিছক ক্লান্তি না-ও হতে পারে। মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছালে এমন অনুভূতি হয়, যা স্ট্রোকের পূর্ব-লক্ষণ হতে পারে।
স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলে কী করবেন? মনে রাখুন—FAST
স্ট্রোক হলে সময়ই সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তাই এই ৪টি বিষয় মনে রাখুন:
F - Face Drooping: মুখ বাঁকা হয়ে যাচ্ছে কি?
A - Arm Weakness: একটি হাত তুলতে পারছেন না?
S - Speech Difficulty: কথা জড়িয়ে যাচ্ছে?
T - Time to call emergency: এক সেকেন্ডও দেরি না করে ৯৯৯-এ ফোন করুন।
নিজে গাড়ি চালাবেন না। অপেক্ষা করুন জরুরি সহায়তার জন্য। কখন লক্ষণগুলো শুরু হয়েছে—তা মনে রাখুন। কারণ চিকিৎসার জন্য সময় নির্ধারক।
স্ট্রোক চুপিসারে আঘাত হানে। তবে যদি আপনি এই ছোট লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দেন এবং যথাসময়ে পদক্ষেপ নেন, তাহলে হয়তো জীবন বাঁচবে, অক্ষমতা এড়ানো যাবে। নিজের শরীরের প্রতি সচেতন হোন—আর এই তথ্যটি প্রিয়জনদের সঙ্গেও শেয়ার করুন।
Mily