ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: 

সেনাসদস্যরা তাদের ইউনিফর্ম খুলে মৃতদেহ ঢেকেছিল: লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ২৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০০:৫১, ২৫ জুলাই ২০২৫

সেনাসদস্যরা তাদের ইউনিফর্ম খুলে মৃতদেহ ঢেকেছিল: লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন

উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উদ্ধার অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন বলেন, “গত ২১ জুলাই আনুমানিক দুপুর ১টা ১২ মিনিটে একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার মাধ্যমে উত্তরাস্থ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে যায়। যার মাধ্যমে আমরা অনেকগুলো কোমলমতী শিশুকে হারিয়েছি, যা কখনোই পূরণীয় নয়। এই দুর্ঘটনার বাস্তব অভিজ্ঞতা আমি আপনাদের কাছে আজকে তুলে ধরতে চাচ্ছি।”

তিনি জানান, “দুর্ঘটনার শুরুটা হয়েছিল একটি বিকট শব্দের মাধ্যমে, যখন আমরা আমাদের ক্যাম্পেই উপস্থিত ছিলাম। আমাদের ক্যাম্পের নিচে সকল সদস্য তখন দৈনন্দিন কার্যক্রমে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ জানতে পারি যে একটি বিমান ভূপাতিত হয়েছে, ক্র্যাশ করেছে মাইলস্টোনের ক্যাম্পাসের ভেতরে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি সহ ক্যাম্পের সকল সদস্য দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। ক্যাম্প থেকে ক্যাম্পাসের দূরত্ব মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ মিটার হওয়ায় পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগেনি। সেখানে পৌঁছে আমরা যে দৃশ্য দেখি, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। ছোট ছোট কোমলমতী শিশুরা যাদের স্কুল ইউনিফর্ম ছিল, তা পুড়ে গিয়েছে। তাদের শরীরের চামড়া পুরোপুরি কিংবা আংশিকভাবে পুড়ে গিয়েছিল। একজন মানুষ হিসেবে, একজন পিতা হিসেবে এই দৃশ্য সহ্য করা অত্যন্ত কঠিন ছিল।”

তিনি জানান, সেনাবাহিনী আবেগ ও পেশাদারিত্বের সমন্বয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। “আমরা তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম। প্রথমত, আহত ও নিহত শিশু, শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্ধার। দ্বিতীয়ত, আগুন নির্বাপণ। তৃতীয়ত, যুদ্ধবিমানে থাকা দাহ্য তেল থেকে যাতে আরেকটি বিস্ফোরণ না ঘটে তা নিশ্চিত করা।”

লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন বলেন, “ঘটনাস্থলে আমরা রাস্তার মধ্যে বিভিন্ন মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখি। অনেকের হাত-পা কিংবা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সেনাসদস্যরা তাদের শরীরের ইউনিফর্ম খুলে সেই মৃতদেহগুলোর ওপর বিছিয়ে দেন। তারা প্রমাণ করতে চেয়েছেন  ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে নাই।’ এই আবেগ ও মনুষ্যত্ব প্রতিটি সৈনিক ও অফিসারের মধ্যে বিদ্যমান ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের ক্যাম্প থেকে সবাই এসে উদ্ধার কাজে নেমে পড়ি। স্থানীয় পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি।”
তিনি জানান, “উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের অনেক সেনাসদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং বর্তমানে তারা সিএমএইচ ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।”

ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, ও পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় পুরো উদ্ধার কাজটি ২১ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে সম্পন্ন হয়। সেনাবাহিনী তখন ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। তিনি বলেন, “বিমানের অধিকাংশ ধ্বংসাবশেষ বিমান বাহিনী উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং নিহতদের মরদেহ ও আহতদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়।”
 

শেষ পর্যন্ত, ঘটনাস্থলটি পুলিশ কর্তৃক কর্ডন করে রাখা হয় এবং পরদিন বিমান বাহিনী আরও কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে।

আফরোজা

×