ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই সনদ চূড়ান্ত

ঐকমত্য না হলে গণভোট

জিয়াউল হক মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ২৫ জুলাই ২০২৫

ঐকমত্য না হলে গণভোট

.

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রধান চাওয়া জুলাই সনদ প্রায় চূড়ান্ত করেছে সরকার। বর্তমানে খসড়া ঘোষণাপত্রে সংশোধন-সংযোজন-বিয়োজনের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ২০০ ঘণ্টারও অধিক সময় আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সব পক্ষকে মোটামুটি আমলে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে এ খসড়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এতে একই ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলে উল্লেখ থাকছে। একইভাবে দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার বিধানও অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে পার্লামেন্ট হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। সাংবিধানিক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় থাকছে বিরোধী দলের অংশগ্রহণের সুযোগ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্রমতে, রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন কোনো স্বৈরাচার যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাই সনদ চলতি জুলাই মাসেই স্বাক্ষরিত হবে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তিতে ৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে এ সনদ। স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী বর্তমানে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের নেতারা এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করছে সরকার। ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে কোনো ইস্যুতে বৃহৎ কোনো পক্ষের জোর আপত্তি থাকলে প্রয়োজনে অমীমাংসিত বিষয়গুলোতে গণভোটে দেওয়ার চিন্তাও করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩১ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ তৈরির উদ্যোগ নেয়। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের আশ্বাসে ঘোষণাপত্র প্রকাশের অবস্থান থেকে ছাত্ররা শেষ পর্যন্ত সরে আসেন। তখন জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনায় আসে। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানোও হয়েছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি বিএনপি এ বিষয়ে তাদের প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেয়। এরপর প্রায় পাঁচ মাস সরকারের দিক থেকে কোনো উদ্যোগ বা তৎপরতা দেখা যায়নি। পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আন্দোলনের মুখে গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সূত্র জানায়, জুলাই ঘোষণায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের এই ভূখ-ের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রামের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হচ্ছে। এর পরের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ২০২৪ সালে কীভাবে ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান, সে প্রসঙ্গও থাকছে ঘোষণাপত্রে। এ ছাড়া খসড়ায় জুলাই অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের অপরাধগুলোর উপযুক্ত বিচার করার অভিপ্রায়ের কথাও এতে রয়েছে।
সূত্রমতে, হাসিনা সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি, গণহত্য, গুম, খুন, আয়নাঘর প্রভৃতি অপকর্মের একটি বর্ণনা স্থান পাবে জুলাই সনদে। বলা হবে, বিগত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম, খুন, আইন বহির্ভূত হত্যাকা-, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার বিষয়টিও। বিগত সরকারের আমলে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক, মানবিক অধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি খুনি রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনা পরিবারের নেতৃত্বে অবাধে লুটপাট, ব্যাংক লুট, টাকা পাচার এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে বিগত সরকার বাংলাদেশ ও এর সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে। 
শেখ হাসিনার ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় পনেরো বছর যাবত নিরন্তর সংগ্রাম করে জেলজুলুম, হামলা মামলা, গুম খুন ও আইনবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়। বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারির বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে তপ্লিবাহক আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে। ধারাবাহিক তিনটি নির্বাচনী প্রহসনের মধ্য দিয়ে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার এদেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমলে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যত্র ছাত্র ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারি চাকরিতে দলীয় নিয়োগের একচেটিয়া ও কোটাভিত্তিক সুবিধা সৃষ্টি করে ছাত্র, চাকরি প্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়। 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন ও গণহত্যা চালানোর ফলশ্রুতিতে সারাদেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এমন একটি প্রেক্ষাপটে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষগুলো, আমরা এই ঘোষণা প্রদান করছি যে, ‘১৯৭২ এবং ১/১১ কালের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটানোর আমাদের একটি নতুন প্রজাতন্ত্র (রিপাবলিক) প্রয়োজন যা রাষ্ট্রে সকল ধরনের নিপীড়ন, শোষণ ও বৈষম্যর অবসান ঘটাবে এবং এদেশের তরুণ সমাজের প্রত্যাশাকে ধারন করতে পারবে। আমরা এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম যে, এই ঘোষণাপত্রকে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।’
এদিকে চলতি মাসের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে চায় জানিয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে একটি সনদের জায়গায় যাওয়া। দেশের সবাই সেটা প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দিনের পর দিন আলোচনার মাধ্যমে আমরা তাদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছি। জনগণের চাওয়ার জায়গাটাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ঐকমত্যে এসেছেন। যেসব ক্ষেত্রে পুরোপুরি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি সেসব বিষয়েও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তারা ছাড় দেবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, জুলাই ঘোষণার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। এর সব বিষয়ে সব দল পুরোপুরি একমত না হলেও জোরালো বিরোধিতা কারও নেই। কোনো কোনো বিষয়ে দু-একটি দলের আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা অবস্থান থেকে সরে আসবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। সবদল একমত না হলে কিংবা কোনো পক্ষ জোরালো আপত্তি উত্থাপন করলে জুলাই ঘোষণার কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণা এখন দেশবাসীর জোরালো দাবি। ঘোষণায় যেসব বিষয় নিয়ে আসা হচ্ছে সেগুলোতে দেশবাসীর জোরালো সমর্থন রয়েছে। সরকার কি তাহলে বিরোধপূর্ণ বিষয়ে গণভোটের আশ্রয় নেবে? এ প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, চূড়ান্ত বিচারে তো জনগণই দেশের প্রকৃত মালিক। সরকার বাধ্য হলে জনমত যাচাইয়ে যেতেই পারে! তবে এমন পর্যায়ে যেতে হবে না বলেই মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ॥ জুলাই সনদে প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বের পরিবর্তে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন এবং এক ব্যক্তির একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধান না হওয়ার বিধান করা হচ্ছে। তবে একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হতে কোনো বাধা থাকছে না। এছাড়া কেউ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা এবং রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচকমন্ডলীর ভোটে সৎ, যোগ্য ও সুনামসম্পন্ন একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের লক্ষ্যে বিধান করা হচ্ছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল ও অনাস্থা প্রস্তাব ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যগণ নিজ দলের সমালোচনা করতে বা বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন- এমন বিধান করা হচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ এবং একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হওয়ার প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে দেশের প্রধান ক্রিয়াশীল দল বিএনপি এখনো পর্যন্ত ইতিবাচক মত দেয়নি। 
দুই কক্ষের আইনসভা ॥ বর্তমান এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তন করে দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নিম্নকক্ষের নাম জাতীয় সংসদ এবং উচ্চকক্ষ হবে সিনেট। নিম্নকক্ষের সদস্য সংখ্যা হবে ৪০০ জন। এর মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। উচ্চকক্ষের আসন সংখ্যা হবে ১০০টি। এর মধ্যে ৩০টি আসন সংরক্ষিত থাকবে নারীদের জন্য। উচ্চকক্ষের আসন বণ্টিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। উভয় কক্ষেই একজন করে ডেপুটি স্পিকার থাকবেন এবং তিনি নির্বাচিত হবেন বিরোধী দল থেকে। এছাড়াও জুলাই সনদে উল্লেখ থাকবে রাষ্ট্র পরিচালনার ৫টি মূলনীতি। এগুলো হলো- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি। সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিধি বাড়িয়ে খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, ইন্টারনেট সেবা ও ভোটাধিকারকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করা হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ॥ নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালনের জন্য একটি দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করা হবে, যার মেয়াদ হবে ১২০ দিন। নির্বাচনকালে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে নির্বাহী বিভাগের পক্ষ থেকে এমন কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেওয়ার লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করা হবে। প্রতি জনশুমারির পর সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে একটি স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠন করার কথাও এতে থাকবে। 
প্রবাসীদের ভোটাধিকার ॥ সকল প্রবাসী বাংলাদেশিকে দ্রুততম সময়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে তাঁদের পাসপোর্টের ডাটাবেজে সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহার করে এনআইডি স্মার্ট কার্ড প্রদান এবং তাদের জন্য পোস্টাল ব্যালট বা অনলাইনে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা, সারাদেশে এনআইডি সংক্রান্ত সকল সেবা সুচারুরূপে সম্পন্ন, জনগণের হয়রানির অবসান, জাতীয় তথ্য ভা-ারের নিরবচ্ছিন্ন পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘জাতীয় ডেটা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান গঠন করা এবং দশম (২০১৪), একাদশ (২০১৮) ও দ্বাদশ (২০২৪) জাতীয় নির্বাচনের অনিয়ম ও জালিয়াতি তদন্তে গঠিত কমিটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের দায় নিরূপণ করার ঘোষণা আসবে এই সনদে।
রাজনৈতিক দলের সংস্কার ॥ জুলাই সনদে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা এবং সদস্যদের গোপন ভোটে দলের সকল স্তরের নেতৃত্ব নির্বাচিত করার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের সকল আর্থিক লেনদেন, ব্যাকিং চ্যানেল বা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে পরিচালনা করা, দলের আয়-ব্যয়ের অডিটেড হিসাব প্রকাশ করা ও তা নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার বিধান করা হবে। রাজনৈতিক দলের লেজুড় হিসেবে কোনো ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং বিদেশি শাখা না থাকার বিধান কার্যকর করা হবে। 
প্রস্তাব থাকবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রত্যেক সংসদীয় এলাকায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সদস্যদের গোপন ভোটে সর্বোচ্চ তিন সদস্যবিশিষ্ট প্রার্থী-প্যানেল তৈরি এবং দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক প্যানেল থেকে মনোনয়ন প্রদান বাধ্যতামূলক করা। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন প্রতি পাঁচ বছর পর পর নবায়নের বিধান প্রবর্তন করার কথাও ভাবছে কমিশন।
সংবিধান সংশোধন ॥ কোনো দল যাতে নিজেদের ইচ্ছেমতো সংবিধান সংশোধন করতে না পারে সেজন্য সংবিধান সংশোধনের জন্য আইনসভার উভয় কক্ষেরই দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের ভোট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। একটি স্বাধীন স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন এবং এটিকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ঘোষণাও এতে থাকছে। থাকবে স্থানীয় সরকারের সকল স্তরে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ করার বিধান। এছাড়া পুলিশের পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করার কথা থাকবে এ ঘোষণায়।
বিচার বিভাগ ॥ বিচার ব্যবস্থাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করার কথা থাকছে জুলাই ঘোষণায়। এছাড়াও প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা, বিদ্যমান পাবলিক প্রসিকিউটর ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটিয়ে দক্ষ ও নিরপেক্ষ পেশাজীবীদের নিয়ে একটি স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রবর্তন করার কথা বলা হবে এ ঘোষণায়।

প্যানেল

×