
ছবি: সংগৃহীত
টেক উদ্যোক্তা ব্রায়ান জনসন তার বহুল আলোচিত বার্ধক্য প্রতিরোধমূলক স্টার্টআপ ব্লুপ্রিন্ট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। তার ভাষায়, স্টার্টআপটির অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং দার্শনিক লক্ষ্যে পরিবর্তনই এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ।
জনসনের দাবি, বাণিজ্যিক উদ্যোগগুলো তাকে বিভ্রান্ত করছে এবং মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ জানানোই এখন তার প্রধান উদ্দেশ্য। আর তাই তিনি এখন সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে চান তার নতুন আন্দোলন ‘Don't Die’-এর দিকে। এটি শুধু একটি স্বাস্থ্যবিষয়ক দর্শন নয়, বরং একে তিনি দেখছেন ভবিষ্যতের এক ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক কাঠামো হিসেবে।
প্রযুক্তিবিদ থেকে বার্ধক্য প্রতিরোধের যোদ্ধা
১৯৭৭ সালের ২২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ অঙ্গরাজ্যের প্রোভো শহরে জন্ম নেওয়া জনসন বড় হয়েছেন স্প্রিংভিলের একটি খামারে। কৈশোরে আলফালফা ও ভুট্টা চাষে মায়ের সঙ্গে কাজ করতেন তিনি। ১৯ বছর বয়সে ইকুয়েডরে দু’বছর ধর্মপ্রচারের কাজ করেন। পরবর্তীতে ব্রিগহ্যাম ইয়াং ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক এবং ২০০৭ সালে শিকাগো ইউনিভার্সিটি বুথ স্কুল অব বিজনেস থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন।
তার সবচেয়ে বড় সফলতা আসে ২০০৭ সালে Braintree প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এটি একটি অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসিং প্রতিষ্ঠান, যেটি পরবর্তীতে Venmo অধিগ্রহণ করে এবং ২০১৩ সালে PayPal-এর কাছে ৮০০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়। এতে জনসনের ব্যক্তিগত আয় হয় প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার।
এরপর থেকে জনসন তার সম্পদ ব্যয় করেন উচ্চাভিলাষী বৈজ্ঞানিক প্রকল্পে। ২০১৪ সালে OS Fund প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১৬ সালে Kernel নামে একটি নিউরোটেক স্টার্টআপ চালু করেন, যার লক্ষ্য মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি তৈরি।
‘প্রজেক্ট ব্লুপ্রিন্ট’: ২০ লাখ ডলারের শরীরের পরীক্ষা
জনসনের বার্ষিক ২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পরিচালিত ‘প্রজেক্ট ব্লুপ্রিন্ট’ নিয়ে বহু বিতর্ক ও আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এই রুটিনে ছিল নিরামিষাশী খাদ্য, প্রতিদিন ১০০টির বেশি সাপ্লিমেন্ট, নিয়মিত ব্যায়াম, ঘুমের মান উন্নয়ন এবং প্রায় প্রতিদিন শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ। তিনি দাবি করেন, এতে তার শারীরিক বয়স ৪০ পেরিয়ে যাওয়ার পরও ১৮ বছরের সমতুল্য হয়ে গেছে।
তবে সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন এই পদ্ধতির নৈতিকতা এবং পুনরাবৃত্তিযোগ্যতা নিয়ে। তবে জনসন নিজেকে ঘোষণা করেছেন ‘প্রফেশনাল রিজুভেনেশন অ্যাথলিট’ হিসেবে।
কেন বন্ধ হচ্ছে ব্লুপ্রিন্ট?
জনসন নিজেই স্বীকার করেছেন যে ব্লুপ্রিন্ট পরিচালনা করা ছিল একপ্রকার ‘ঝামেলাপূর্ণ’ কাজ। ব্যবসায়িক স্বার্থ তার দার্শনিক উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে—এমন অনুভব থেকেই এই সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নে বাণিজ্যিক পণ্য বিক্রি বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে।
তবে অনেকে মনে করছেন, মূল কারণ সম্ভবত ব্যবসার টিকে থাকার আর্থিক দিক। জনসন যদিও জোর দিয়ে বলেছেন, তার এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণরূপে আদর্শগত পরিবর্তনের ফল।
সামনে কী করছেন ব্রায়ান জনসন?
তিনি জানিয়েছেন, ব্লুপ্রিন্ট বিক্রি বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের একেবারে দ্বারপ্রান্তে তিনি। এরপর তার পুরো মনোযোগ থাকবে ‘Don't Die’ আন্দোলনের ওপর। এটি হতে যাচ্ছে একটি দার্শনিক-আধ্যাত্মিক মিশন, যেটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জীবন সম্প্রসারণের যুগে এক নতুন বিশ্বাসব্যবস্থার রূপরেখা দিতে পারে।
ভবিষ্যতে মানুষ কীভাবে মৃত্যুকে দেখবে, তা বদলে দেওয়ার এই প্রয়াসে ব্রায়ান জনসন নিজেকে স্থাপন করেছেন এক সাহসী কিন্তু বিতর্কিত অভিযাত্রীর ভূমিকায়—একজন, যিনি মৃত্যুকেই চিরতরে বিদায় জানানোর স্বপ্ন দেখেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব