
ছবি: সংগৃহীত
একসময় বিকেল নামলেই পাড়ার মাঠে শিশুদের দৌড়ঝাঁপে মুখর হতো চারপাশ। ‘লুকোচুরি’, ‘গোল্লাছুট’, কিংবা ‘বউচি’—এসব ছিল শৈশবের অপরিহার্য আনন্দ। কিন্তু সময় বদলে গেছে। এখন শিশুরা সেই বিকেলটা কাটায় বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে। খেলাধুলা, আড্ডা, অবসর—সবই গিলে খাচ্ছে লেখাপড়ার অতিরিক্ত চাপ।
‘আমার ছেলেটা ক্লাস ফাইভে পড়ে। সকালে স্কুল, দুপুরে কোচিং, রাতে প্রাইভেট টিচার। ওর নিজের মতো করে খেলতে পারা বা সময় কাটানোর সুযোগই নেই,’—বললেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার এক অভিভাবক মাহমুদা বেগম।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা চাই ও ভালো করুক, কিন্তু ওর মুখে হাসিটা কমে যাচ্ছে দিন দিন। এটা নিয়ে আমরা নিজেরাও চিন্তিত।’
একই বিষয়ে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে খেলাধুলাকে উৎসাহ দিই, কিন্তু বাস্তবতা হলো—অভিভাবকেরাই অনেক সময় পড়ালেখার বাইরে অন্য কিছুতে সময় দেওয়া মানতে চান না।’
তিনি জানান, বিদ্যালয়ে নির্ধারিত শারীরিক শিক্ষা ক্লাস থাকলেও শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ এত বেশি যে অনেক সময় তারা আনন্দ করতেও মন থেকে আগ্রহ পায় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাধুলা শুধু বিনোদন নয়, বরং শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। একটানা পড়াশোনা শিশুর মধ্যে ক্লান্তি, আগ্রহ হারিয়ে ফেলা এবং বিষণ্নতা পর্যন্ত তৈরি করতে পারে।
ঠাকুরগাঁওয়ের শিশু মনোবিদ মুনতাহা ফেরদৌস বলেন, ‘শিশুরা মানুষ হয়ে ওঠে শিখে, খেলাধুলা করে, পরিবেশের সঙ্গে মিশে। শুধু বইয়ের মধ্যে আটকে থাকলে তাদের চিন্তাভাবনার পরিধি ছোট হয়ে যায়।’
আজকের দিনে শিশুরা হয়তো পরীক্ষায় ভালো করছে, কিন্তু তারা কী হারাচ্ছে—সেটা কি আমরা লক্ষ্য করছি? বইয়ের ভারে নুয়ে যাওয়া শৈশব এক সময় হয়তো তাদের জীবনের সবচেয়ে অপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠবে।
সময় এসেছে চিন্তা পাল্টানোর। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা, অবসর আর স্বাধীনতাও হোক শৈশবের অংশ। যাতে তারা শুধু পরীক্ষায় নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই হয়ে উঠতে পারে সফল এবং আনন্দময় মানুষ।
রাকিব