ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

হার্ট অ্যাটাক এড়াতে চিকিৎসকরা নিজেরাই প্রতিদিন এই ৩টি ব্যায়াম করেন!

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ২৪ জুলাই ২০২৫

হার্ট অ্যাটাক এড়াতে চিকিৎসকরা নিজেরাই প্রতিদিন এই ৩টি ব্যায়াম করেন!

ছবি: সংগৃহীত

হৃদপিণ্ড আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেশি, যা সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিরন্তর কাজ করে। অথচ, আধুনিক জীবনযাত্রা এবং মানসিক চাপের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। অনেকেই হৃদপিণ্ডের সুস্বাস্থ্যের জন্য কী করবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। তবে বিশেষজ্ঞরা এবং স্বয়ং চিকিৎসকরা কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়ামকে অত্যন্ত কার্যকর বলে মনে করেন, যা তারা নিজেদের হার্ট সুস্থ রাখতে নিয়মিত অনুশীলন করেন। এই তিনটি ব্যায়াম সহজ এবং যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য উপকারী, যা আপনার হৃদপিণ্ডকে পাথরের মতো শক্তিশালী রাখতে পারে।

১. দ্রুত হাঁটা (Brisk Walking): হৃদপিণ্ডের জন্য সেরা কার্ডিও
দ্রুত হাঁটা হলো হৃদপিণ্ডের জন্য সবচেয়ে সহজ, নিরাপদ এবং কার্যকর কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর জন্য কোনো বিশেষ সরঞ্জাম বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না, যা একে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষ উভয়ের কাছেই জনপ্রিয় করে তুলেছে।

কেন কার্যকর: দ্রুত হাঁটা হৃদপিণ্ডের স্পন্দন বাড়ায়, রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতেও সহায়ক। নিয়মিত হাঁটা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে করবেন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটুন, যেখানে আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি শ্বাস নেবেন, কিন্তু কথা বলতে পারবেন। শুরুটা ধীর গতিতে করে ধীরে ধীরে গতি বাড়ান।

২. যোগব্যায়াম ও স্ট্রেচিং (Yoga and Stretching): নমনীয়তা ও মানসিক শান্তির চাবিকাঠি
অনেকে মনে করেন, হৃদপিণ্ডের জন্য শুধু উচ্চ-তীব্রতার ব্যায়ামই প্রয়োজন। কিন্তু যোগব্যায়াম এবং নিয়মিত স্ট্রেচিং হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শুধু শারীরিক নমনীয়তাই বাড়ায় না, মানসিক চাপ কমাতেও কার্যকর।

কেন কার্যকর: যোগব্যায়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এর শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশলগুলো (প্রাণায়াম) ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ কমায়। মানসিক চাপ সরাসরি হৃদরোগের ঝুঁকির সাথে জড়িত, আর যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতিগুলোর একটি।

কীভাবে করবেন: প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট সহজ যোগাসন যেমন – সূর্য নমস্কার, বজ্রাসন, ভুজঙ্গাসন এবং শরীরের প্রধান পেশীগুলোর জন্য স্ট্রেচিং করুন। ইউটুবে বা প্রশিক্ষকের সাহায্যে প্রাথমিক ধাপগুলো শিখতে পারেন।

৩. শরীরের ওজনের ব্যায়াম (Bodyweight Exercises): পেশী শক্তিশালীকরণে অনন্য
জিমে গিয়ে ভারী ওজন তোলার প্রয়োজন নেই। আপনার নিজের শরীরের ওজন ব্যবহার করেই আপনি পেশী শক্তিশালী করতে পারেন, যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কোয়াট, পুশ-আপ, প্ল্যাঙ্ক, এবং লাঞ্জ-এর মতো ব্যায়ামগুলো চিকিৎসকরা প্রায়শই সুপারিশ করেন।

কেন কার্যকর: পেশী শক্তিশালী হলে শরীর আরও কার্যকরভাবে অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারে, যা হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ কমায়। শক্তিশালী পেশী রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

কীভাবে করবেন: সপ্তাহে ২-৩ দিন এই ব্যায়ামগুলো করুন। প্রতিটি ব্যায়াম ১০-১৫ বার করে ২-৩ সেট পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের পুনরাবৃত্তি বাড়াতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

যেকোনো নতুন ব্যায়াম শুরু করার আগে, বিশেষ করে যদি আপনার কোনো পূর্ব বিদ্যমান স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন। এই তিনটি ব্যায়াম সহজ এবং অত্যন্ত কার্যকরী, যা আপনার হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে এবং দীর্ঘ, সুস্থ জীবন লাভে সহায়তা করবে। চিকিৎসকরাও যখন গোপনে এই রুটিন অনুসরণ করেন, তখন এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকে না। আজ থেকেই আপনার হৃদপিণ্ডের যত্ন নেওয়া শুরু করুন!

ফারুক

×