
ছবি: সংগৃহীত।
জমি সংক্রান্ত বিরোধ বা বিভ্রান্তি এড়াতে সরকারি আমিন দিয়ে জমির সঠিক মাপ করানো অনেকেরই চাওয়া। অনেকেই মনে করেন, সরকারি সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জমি পরিমাপ করালে তা নিখুঁত ও নির্ভুল হয়। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এটি এতটা সহজ নয়। সরকারি আমিন পেতে হলে বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যা অনেকেরই অজানা।
প্রথমত, সরকারি সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জমি পরিমাপ করাতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূমি দপ্তরে, অর্থাৎ ব্লক অফিসে একটি দরখাস্ত দিতে হয়। এই দরখাস্তে জমি পরিমাপের কারণ, নিজের নাম, ঠিকানা এবং জমির তফসিল—যেমন দাগ নম্বর, মৌজা, চারপাশের সীমানা ইত্যাদি উল্লেখ করতে হয়। পাশাপাশি, ১০ টাকার কোর্ট ফি স্ট্যাম্প সংযুক্ত করে আবেদন জমা দিতে হয়।
তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিএলআর (বাংলাদেশ ল্যান্ড রেকর্ডস) অফিসে সরকারি সার্ভেয়ার বা আমিন পাওয়া যায় না। তখন সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বাইরের কোনো অনুমোদিত বেসরকারি সার্ভেয়ারকে নিয়োগ করে এবং একজন সহকারী কর্মকর্তা বা আরআই (রাজস্ব পরিদর্শক) সঙ্গে পাঠান।
বর্তমানে সরাসরি বিএলআর অফিসে গিয়ে সরকারি আমিন পাওয়া কার্যত অসম্ভব। এক্ষেত্রে আপনাকে সিভিল কোর্টে (মহাকুমা আদালত) গিয়ে "পার্টিশন স্যুট" বা জমি বণ্টনের মামলা করতে হবে। জমি সংক্রান্ত বিরোধ বা একাধিক মালিকের মধ্যে সীমানা বিভ্রান্তি থাকলে আদালতের মাধ্যমে জমি পরিমাপের নির্দেশনা চাওয়া যেতে পারে।
আদালতের আদেশ পাওয়ার পর সেই কপি জমা দিতে হবে বিএলআর অফিসে। এরপর নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আপনি সরকারি আমিন বা সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জমি পরিমাপের সুযোগ পাবেন।
ফি-এর পরিমাণ নির্ভর করে জমির পরিমাণের ওপর। যেমন:
-
১০ শতক পর্যন্ত: প্রায় ১,০০০ টাকা
-
১০-৩০ শতক: ২,০০০ টাকা
-
৩০-৫০ শতক: ৩,০০০ টাকা
-
অতিরিক্ত দিন লাগলে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে যুক্ত হবে
তবে এটি পুরনো একটি নির্দেশনার ভিত্তিতে বলা। বর্তমানে এ হার আরও বেশি হতে পারে। অনেকেই পার্টিশন শুট করে জমি মাপতে গিয়ে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সারসংক্ষেপে, এখন আর সরাসরি আবেদন করলেই সরকারি আমিন পাওয়া যায় না। প্রয়োজন হলে আদালতের আশ্রয় নিন, অর্ডার কপি নিয়ে তবেই বিএলআর অফিসে জমি মাপার জন্য আবেদন করুন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ভবিষ্যতে জমি মাপ সংক্রান্ত ফি ও পদ্ধতিতে নতুন নিয়ম আসতে পারে। তাই বিএলআর অফিস বা সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে হালনাগাদ তথ্য জেনে নিন।
নুসরাত