
বোহেমিয়ার স্ক্যান্ডাল
(পূর্ব প্রকাশের পর)
থাকবো না, ফটোটাও থাকবে না। হিজ ম্যাজেস্টি নিজ হাতে নিজের ফটো উদ্ধার করবেন, সেটাই ভালো হবে।’
‘কটার সময় আসবো এখানে?’
‘সকাল আটটায়। তখনো গৃহকর্ত্রী বিছানায় থাকবেন। আমরা ফাঁকা ময়দান পাবো। যা করার ঝটপট করতে হবে ডাক্তার। কেননা বিয়ের পর গৃহকর্ত্রীর জীবনে নানারকম পরিবর্তন ঘটবে এখন, যে কোনো সময়। রাজাকে এখনই মেসেজ পাঠাতে হবে।’আমরা বেকার স্ট্রিটে পৌঁছে গেলাম। দরজায় দাঁড়িয়ে আছি, হোমস চাবির জন্য পকেট হাতড়াচ্ছে। এমন সময় কে যেন আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল। যেতে যেতে বললো, ‘গুড নাইট, মিস্টার শার্লক হোমস।’
আশপাশে অনেক মানুষ। ওভারকোট পরা ছিপছিপে এক যুবককে দেখলাম দ্রুত চলে যাচ্ছেÑ মনে হলো সে-ই কথাটা বলেছে।
‘গলাটা খুব চেনা চেনা লাগলো।’ আধো অন্ধকার গলির দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো হোমস। ‘ভাবছি...কে এই যুবক!’
তিন.
রাতটা বেকার স্ট্রিটে থেকে গেলাম। সকালে টোস্ট আর কফি দিয়ে নাস্তা করছি, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে বোহেমিয়ার রাজা ঢুকলো ঘরে।
‘ফটোটা পেয়ে গেছেন সত্যিই?’ উত্তেজিত গলা তার।
‘এখনো পাইনি।’
‘পাওয়ার আশা আছে?’
‘আছে।’
‘তাহলে চলুন। আমি আর ধৈর্য ধরতে পারছি না।’
‘একটা ক্যাব ডাকতে হবে।’
‘ডাকতে হবে না। আমার ব্রুহাম সঙ্গেই আছে।’
‘তাহলে তো কথাই নেই। চলুন।’
‘ইরিন এডলার এখন বিবাহিতা নারী।’ হোমস বললো।
‘বিবাহিতা? কবে বিয়ে করলো?’
‘গতকাল।’
‘কাকে করলো বিয়ে?’
‘নর্টন নামে একজন ইংলিশ আইনজীবীকে।’
‘তাকে নিশ্চয়ই ভালোবাসে না ইরিন।’
‘আশা করি বাসে।’
‘আশা করেন? কেন বলুন তো?’
‘ইয়োর ম্যাজেস্টি, সে যদি নর্টনকে ভালোবাসে তাহলে আপনার দুশ্চিন্তার আর কোনো কারণ থাকে না। কেননা নর্টনকে ভালোবাসলে সে আর আপনাকে ভালোবাসবে না, সহজ হিসাব। আপনাকে ভালো না বাসলে আপনার ব্যাপারে তার আর মাথাব্যথাও থাকবে না।’
‘সত্যি কথা। তারপরও...আমার ভাবতে ভালো লাগেÑ বোহেমিয়ার রানী হলে তাকে দারুণ মানাতো।’ কথাটা বলে কেমন যেন হঠাৎ নীরব হয়ে গেল বোহেমিয়ার রাজা।
ব্রায়োনি লজের দরজা খোলা। বয়স্ক একজন মহিলা গৃহকর্মী দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়ির উপরের ধাপে। তার চোখেমুখে বিদ্রুপের হাসি। ব্রুহাম থেকে নেমে দাঁড়াতেই মহিলা বললো, ‘মিস্টার শার্লক হোমস নিশ্চয়ই?’
হোমস চমকে উঠলো। একটু অবাক হয়ে বললো, ‘হ্যাঁ, আমিই মিস্টার হোমস।’
‘আমার মিসট্রেস বলছিলেন আপনি আসতে পারেন। তিনি তার স্বামী সহ ইউরোপের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন সোয়া পাঁচটার ট্রেনে, চ্যারিং ক্রস স্টেশন থেকে।’
‘কী!’ থমকে দাঁড়ালো হোমস। হতভম্ব হয়ে গেছে সে। ‘আপনি বলছেন তিনি ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে গেছেন?’
‘চলে গেছেন এবং আর ফিরবেন না বলে গেছেন।’
‘তাহলে আমার কাগজপত্র?’ হতাশ গলায় জিজ্ঞেস করলো রাজা। ‘সব নিয়ে গেছে নিশ্চয়ই?’
‘দেখা যাক।’ গৃহকর্মীকে পাশ কাটিয়ে ড্রইংরুমে ঢুকলো হোমস। পিছে পিছে আমি আর রাজা। ঘরের ভেতরে আসবাবপত্র সব এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শেলফের পাল্লা খোলা, ড্রয়ার বের হয়ে আছেÑ দেখে মনে হয় যাওয়ার আগে তাড়াহুড়োয় এইসব নাড়াচাড়া করেছে কেউ। কলিংবেলের দড়ির পেছনের স্লাইডিংয়ের কাছে দৌড়ে গেল হোমস। ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনলো একটা ছবি আর একখানা চিঠি। ছবিটা ইরিন এডলারের, ইভনিং ড্রেস পরে আছে সে। চিঠির খামে শার্লক হোমসের নাম লেখা। খাম খুলে চিঠিটা বের করলো হোমস। আমরা দুজন হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। চিঠিতে লেখাÑ
‘মাই ডিয়ার মিস্টার শার্লক হোমস,
দারুণ দেখিয়েছেন। প্রথমে খুব অবাক হয়েছিলাম আমি। আগুন আগুন চিৎকার শোনার আগে পর্যন্ত বুঝতেই পারিনি ঘটনা কী। তারপর যখন বুঝতে পারলাম গুপ্তধনের জায়গাটা আপনাকে দেখিয়ে দিয়েছি, তখনই আমার ভুল ভাঙলো। অনেকদিন আগেই বন্ধুরা আমাকে সতর্ক করেছে। তাদের ধারণা ছিলÑ রাজা যদি কাউকে এ কাজের জন্য নিযুক্ত করে, তাহলে সেই যোগ্য ব্যক্তিটি হবেন আপনি। আপনার ঠিকানাও তারা আমাকে দিয়ে রেখেছে।
যা হোক, এতকিছুর পরেও সেদিনের সেই আহত দয়ালু পাদ্রিকে আমি এতটুকুও সন্দেহ করিনি প্রথমে। কিন্তু জানেন তো, আমি নিজেও একজন অভিনেত্রী। পুরুষের ছদ্মবেশ দেখে অভ্যেস আছে আমার। নিজেও আমি অনেক সময় পুরুষের ছদ্মবেশে চলাফেরা করি। এতে অনেকটা স্বাধীনতা পাওয়া যায়। ঘর ধোঁয়ায় ভরে গেলে আমি আমার কোচম্যানকে আপনার পাহারায় রেখে উপরে চলে গিয়েছিলাম। দ্রুত ছদ্মবেশ পরে নিই। যুবক সেজে যখন নিচে এলাম দেখি আপনি বেরিয়ে যাচ্ছেন।
আপনাকে অনুসরণ করে আপনার বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিলাম আমি। নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম যে সত্যিই সেলিব্রিটি মিস্টার শার্লক হোমস আমার বিষয়ে ইন্টারেস্টেড কিনা। তারপর বোকার মতো কাজটা করে ফেললামÑ আপনাকে শুভরাত্রি জানালাম পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়। সেখান থেকে চলে গেলাম আমার স্বামীর বাসায়। (চলবে..)
প্যানেল হু